অর্ণব আইচ: অফিস থেকে বের হলেই বন্ধ করতে হবে আলো, পাখা, এসি। কোনও ভুল বরদাস্ত করা হবে না। একেবারে সেনার নির্দেশ। না মেনে উপায় নেই। আর সেনাকর্তাদের এই একটি নির্দেশই এক লাফে মাসে তিন লাখ টাকা কমিয়ে দিল ফোর্ট উইলিয়ামের বিদ্যুতের বিল। একইসঙ্গে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় সোমবার ফোর্ট উইলিয়ামে বসল দূষণ মাপার যন্ত্র। ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতর ছাড়াও ময়দান ও তার সংলগ্ন এলাকায় কতটা দূষণ হচ্ছে, এবার এই যন্ত্রই তা জানিয়ে দেবে। সেইমতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে পারে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিয়ে বহুদিন ধরেই ভাবছিলেন ফোর্ট উইলিয়ামের কর্তারা। তার ভিত্তিতেই তাঁরা পরিকল্পনা করেন, বেশি সংখ্যক সোলার প্যানেল বসানো ও সাধারণ আলোর বদলে এলইডি আলো ব্যবহার করা, যার ফলে বিদ্যুতের সাশ্রয় হতে পারে। একই সঙ্গে দেখা যায়, সেনা সদরের বহু অফিস ও আবাসনে সময়মতো আলো, এসি বা পাখা নেভানো হয় না। এই বিষয়টি নিয়ে সেনাকর্তারা বৈঠকও করেন। এরপরই ফোর্ট উইলিয়ামে সেনাকর্তারা নির্দেশ দেন, অফিস ছাড়ার আগে বন্ধ করতে হবে ঘরের আলো, পাখা। এসিও বুঝেশুনে চালাতে হবে। নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে সচেতনও করা হয় সেনাকর্মী ও তাঁদের পরিবারকে। কারণ, ফোর্ট উইলিয়ামের মধ্যে রয়েছে সেনাদের আবাসনও। এই নির্দেশ কাজে দেয়। ফল মেলে হাতেনাতে। এদিন ফোর্ট উইলিয়ামে ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি-ইন-সি ইস্টার্ন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম এম নারাভান জানান, গত দু’মাসের বিদ্যুতের বিল তিন লাখ টাকা করে কমানো সম্ভব হয়েছে। সেনাকর্তাদের আশা, এভাবে আরও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যেতে পারে। কমতে পারে আরও বিল। ফোর্ট উইলিয়াম ও তার সংলগ্ন এলাকায় গাছ ভর্তি। তবুও সবুজের মধ্যে যে দূষণ ছড়াচ্ছে, তা বুঝতে পেরেছিলেন ফোর্ট উইলিয়ামের কর্তারা। সেই কারণেই তাঁরা দূষণ মাপার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও ভারতীয় সেনার যৌথ উদ্যোগে ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতরই বসানো হল ‘কনটিনিউয়াস অ্যামবিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং সিস্টেম’। জানা গিয়েছে, এই যন্ত্রের সাহায্যে সহজেই পরিমাপ করা যাবে বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, অ্যামোনিয়ার মতো গ্যাস।
এ ছাড়াও তাপমাত্রা, হাওয়ার গতি, সোলার রেডিয়েশন, বৃষ্টির সম্ভাবনাও বোঝা যাবে এই যন্ত্রের মাধ্যমে। জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখাও যাবে এই পরিমাপ। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক জানান, এর আগে কলকাতা ও রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় এই ধরনের যন্ত্র বসানো হলেও তা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ছিল না। এই বছর ফোর্ট উইলিয়াম ছাড়াও যাদবপুর ৮বি, সল্টলেক এটিআই, বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম, হাওড়ার বেলুড়ের মতো যে জায়গাগুলিতে যে যন্ত্রগুলি বসানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। ফোর্ট উইলিয়াম ঘিরে প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকার দূষণ মাপা যাবে এই যন্ত্রে। এদিন জিওসি-ইন-সি জানান, গত এপ্রিল মাসে ইস্টার্ন কমান্ড ‘গো গ্রিন’ প্রকল্প শুরু করে। তাতে ফোর্ট উইলিয়ামে হাজারটি নতুন গাছ লাগানো হয়েছে। হাজারেরও বেশি গাছ লাগানো হচ্ছে ময়দান এলাকায়। বর্জ্য আলাদা করে ফেলারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফোর্ট উইলিয়াম ও তার সংলগ্ন এলাকা আরও সবুজ করে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেনাকর্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.