স্টাফ রিপোর্টার: যে কোনও মূল্যে একশো শতাংশ হিংসামুক্ত নির্বাচন চাই। কোনওরকম গাফিলতি বরদাস্ত নয়। নির্বাচন কমিশন সব রকম সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার রাজ্য প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আবারও সাফ জানিয়ে দিলেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন (Sudeep Jain)। এপ্রিলের মধ্যে এ রাজ্যে নির্বাচন শেষ হবে। জেলা প্রশাসন কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কমিশন (Election Commission) কর্তা। এদিন আরও একধাপ এগিয়ে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের তাঁর বার্তা, হাতে সময় বেশি নেই। অবিলম্বে সমস্ত অভিযোগ শূন্যতে নামিয়ে আনুন। মানুষ যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে এখন থেকেই সেই পরিবেশ তৈরি করুন।
বৃহস্পতিবার প্রথমে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং এডিজির (আইন-শৃঙ্খলা) সঙ্গে বৈঠকে বসেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। প্রথমেই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে হিংসার খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, “এবার এমনটা মেনে নেওয়া যাবে না। সাবধান হোন। অভিযোগ পেলে সরাসরি অপসারণের রাস্তায় হাঁটবে কমিশন। এবার পশ্চিমবঙ্গে হিংসামুক্ত নির্বাচন করাটা আমাদের কাছেও চ্যালেঞ্জ।” রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকরা অবশ্য বলার চেষ্টা করেন রাজ্য সরকার কখনওই হিংসার সাথে আপস করে না। সম্ভাব্য সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও বিশেষ আশ্বস্ত হতে পারেননি সুদীপ জৈন। প্রশাসনিক কর্তাদের তিনি পালটা প্রশ্ন করেন, তাহলে এত অভিযোগ আসছে কেন? এখন থেকে প্রতিদিন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কমিশনের দপ্তরে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও কমিশনের কাছে খবর, বেশকিছু অপরাধী জেলে বসেই কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে রাজ্যের জেলবন্দি অপরাধীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও কার্যকলাপ সম্বলিত একটি রিপোর্ট কমিশনে পাঠাতে বলেছেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। এছাড়াও যত শীঘ্র সম্ভব সমস্ত জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে বলেছেন তিনি। রাজ্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক দপ্তরের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “এবার এরাজ্যে হিংসামুক্ত নির্বাচন করতে কমিশন বদ্ধপরিকর। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রয়েছে কমিশনের। বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে দিল্লি।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছাড়াও ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে এদিন রাজ্যের শিক্ষা সচিব মণীশ জৈন ও স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন সুদীপ জৈন। এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে মহামারী পরিস্থিতি ধরেই ভোট হবে এ রাজ্যে। এদিকে কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্যে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হবে। স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ সময় ধরে সেই প্রক্রিয়া চলবে। এদিন স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা সারেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। ভ্যাক্সিনেশনের কাজে ঠিক কত সংখ্যক কর্মী নিয়োগ হবে তার তালিকা চেয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে একটি ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে কমিশনে জমা দিতে বলেছেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। স্বাস্থ্যসচিব অবশ্য কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন, ভ্যাক্সিনেশনের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া কোনভাবেই বিঘ্নিত হবে না।
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী এবার রাজ্যে অন্তত ২৮ হাজার বুথ বাড়তে চলেছে। ফলে সব মিলিয়ে মোট বুথের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি দাঁড়াবে। স্বাভাবিকভাবেই তাই অতিরিক্ত সংখ্যক স্কুল ও কলেজের প্রয়োজন পড়বে। শিক্ষাসচিবের কাছ থেকে সেই সংক্রান্ত হিসাব নেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। কমিশনের কাছে খবর, গত মে’র বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের পর বিশেষত ২৪ পরগনা ও ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির স্কুলগুলির মেরামতির কাজ এখনও বাকি রয়েছে। শিক্ষাসচিবকে সেগুলি যত শীঘ্র সম্ভব মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন সুদীপ জৈন। ঠিক কত সংখ্যক স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে সেই সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও তলব করেছেন তিনি। বুথ সংখ্যা যেহেতু বৃদ্ধি পাবে স্বাভাবিকভাবেই তাই এবার অনেক বেশি সংখ্যক ভোট কর্মীর প্রয়োজন পড়বে। স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি অংশের কর্মীরা যেহেতু ভ্যাকসিনেশনের কাজে ব্যস্ত থাকবেন তাই শিক্ষকদের এবার বেশি করে ভোটের কাজে লাগাতে চায় কমিশন। এ ব্যাপারে শিক্ষা সচিব তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার।
এদিকে, ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শেষ। আজ অর্থাৎ শুক্রবারই চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে এবার বিশেষ পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করেছে কমিশন। বিষয়টি কিভাবে কার্যকর হবে এদিন সে ব্যাপারেও প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা সেরেছেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। সিইও অফিসের ওই আধিকারিকের কথায়, “এবার বিশেষ পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা রয়েছে। ৮০ ঊর্ধ্ব ভোটার, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং কোভিড আক্রান্ত বা কোয়ারেন্টিনে থাকা ভোটাররা এই সুবিধা পাবেন। এজন্য ভোট ঘোষণার পরই কমিশনের প্রতিনিধিরা এই তিন শ্রেণীর ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাবেন। তাঁরা যে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে আগ্রহী তা নিশ্চিত করতে ১২ডি নম্বর ফর্ম পূরণ করে প্রথমে তাঁদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হবে। এরপর মনোনয়ন শেষ হয়ে যাওয়ার পরদিন থেকে ভোট গ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত যেকোনো সময় ভোটারদের বাড়িতে ১৩ এ নম্বর ফর্ম নিয়ে পৌছে যাবেন কমিশন প্রতিনিধিরা। ভোটারদের বাড়িতেই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে। গোটা প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফি হবে।” কর্মসূচি শেষে এদিনই দিল্লি রওনা দিয়েছেন সুদীপ জৈন। আপাতত গোটা বিষয় নিয়ে কমিশনের দফতরে তিনি একটি রিপোর্ট জমা দেবেন। তা পর্যালোচনা পর শীঘ্রই রাজ্যে আসবে কমিশনের ফুল বেঞ্চ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.