ছবি: প্রতীকী
শুভঙ্কর বসু: আইনশৃঙ্খলা মোটেই সুষ্ঠু ভোটের অনুকূল নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত বুথকে ‘বিশেষ স্পর্শকাতর’ বা ‘সুপার সেনসিটিভ’ ঘোষণা করা হোক। এই দাবি নিয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে দরবার করেছিল বিরোধীরা। কিন্তু দাবিটি কার্যত নস্যাৎ করে দিল কমিশন। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যের একশো শতাংশ বুথকে বিশেষ স্পর্শকাতর ঘোষণার মতো গুরুতর পরিস্থিতি তাদের সমীক্ষায় ধরা পড়েনি। কাজেই এই দাবি মানা সম্ভব নয়।
[ড্রেজার পরিষ্কারে নেমে গঙ্গায় তলিয়ে গেলেন শ্রমিক, কাঠগড়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ]
অর্থাৎ, ‘বিশেষ স্পর্শকাতর’ ইস্যুতে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) দিল্লিতে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন, নির্বাচন সদন তাতেই সিলমোহর দিল। সিইও অফিস সূত্রে খবর, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৩০ শতাংশ বুথ শুধু ‘স্পর্শকাতর’ (সেনসিটিভ) হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। সংখ্যার হিসাবে তা ১৮,৪৬১টি বুথ। কমিশনের প্রাথমিক সমীক্ষায় মোট ৭৮ হাজার বুথের মধ্যে এই ক’টি ‘উত্তেজনাপ্রবণ।’ তবে ভোটে সম্ভাব্য গোলযোগকারীদর বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থার খতিয়ান সম্পর্কে সিইও অফিসের পাঠানো রিপোর্টে কমিশন আদৌ সন্তুষ্ট নয়। তাদের পর্যবেক্ষণ, বিপুল সংখ্যক চেনা দুষ্কৃতী এখনও বাইরে ঘুরছে। ভোটের দিন তারা আসরে নেমে পড়তেই পারে। “তা সত্ত্বেও তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি কেন?”, প্রশ্ন কমিশনের। বস্তুত রাজ্যের ভোট পরিস্থিতি দেখতে গত সপ্তাহে কলকাতায় এসে ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন বিষয়টিতে নজর দেন। বিপুল সংখ্যক সম্ভাব্য দুষ্কৃতীর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর না হওয়ায় অসন্তোষও প্রকাশ করেন। রাজ্যের এডিজি আইনশৃঙ্খলা সিদ্ধিনাথ গুপ্তাকে নির্দেশ দেন, এমন কতজন লোক এখনও বাইরে রয়েছে সে ব্যাপারে কমিশনে রিপোর্ট পেশ করতে।
[কলকাতা-কুনমিং বিমান পরিষেবা সীমিত হওয়ায় বাণিজ্যে প্রভাব, চিন্তিত চিন]
সূত্রের খবর, সিদ্ধিনাথ গুপ্তা যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তাতে উল্লেখ রয়েছে এবার ভোটে সম্ভাব্য ১৮ হাজার ৩৯৯ দুষ্কৃতী রয়েছে যারা ঝামেলা পাকাতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই ভোটের আগে এত সংখ্যক অপরাধীকে ব্যবস্থা নিতে গেলে পুলিশকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬১০ জন অপরাধীকে জেলে পুরতে হবে। যা কার্যত অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে এই বিশাল সংখ্যক অপরাধীকে ভোটের আগে কীভাবে দুষ্কর্ম থেকে বিরত করা যায় অবিলম্বে তার উপায় খুঁজতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সবচেয়ে বেশি ২২১৩ জন সম্ভাব্য দুষ্কৃতী চিহ্নিত হয়েছে। এরপরের স্থানেই রয়েছে দুই বর্ধমান। দুই জেলায় মোট ২০০৯ জন সম্ভাব্য দুষ্কৃতী রয়েছে। বীরভুম ও মুর্শিদাবাদে ৩৪০০ দুষ্কৃতী এখনও জেলের বাইরে। শহর কলকাতায় ধরা না পড়া দুষ্কৃতীর সংখ্যা ৭৫২। উত্তর ২৪ পরগনাতেও প্রায় ১২০০ অপরাধী জেলের বাইরে। রাজ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “২০১৬—র বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের আগে রাজ্যে সম্ভাব্য দুষ্কৃতীর সংখ্যা ছিল ১৬৪২৮। এবার সেই সংখ্যাটা অন্তত দু’হাজার বেড়ে গিয়েছে। মূলত সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে দুষ্কৃতীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। ভোটের সময় তাদের দুষ্কর্ম থেকে বিরত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.