অর্ণব আইচ: বহুতল আবাসনের ছাদ থেকে পড়ে বৃদ্ধার রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ালো বালিগঞ্জে। দুর্ঘটনার অন্তত দশ মিনিট পরে নিচে এলেন বৃদ্ধার আত্মীয়রা। মৃতের নাম যামিনী দেশাই (৬৪)। এটি দুর্ঘটনা নাকি আত্মহনন নাকি কেউ তাঁকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে। তানিয়ে ধন্দে পুলিশ। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে শুরু হয়েছে তদন্ত। দেহটিকে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় পাঠিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বালিগঞ্জের আর্লে স্ট্রিট এলাকার এক আবাসন চত্বরে।
সাত সকালে আবাসনের ছাদ থেকে পড়ে গেলেন বৃদ্ধা। এই ঘটনায় লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা, দোকানি, পথচারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা উদ্বিগ্ন হয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দেন। আশ্চর্যের বিষয় বৃদ্ধার পড়ে যাওয়ার খবরেও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তড়িঘড়ি নিচে নেমে আসেননি। প্রায় দশ মিনিট পর নিচে নেমে গুরুতর আহত বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘাড়ে ও মাথায় মারাত্মক চোট পেয়ে ততক্ষণে সংজ্ঞাহীন যামিনীদেবী। এর অনেক সময় পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বৃদ্ধা আত্মঘাতী হয়েছেন নাকি অসবাধানতায় পড়ে গিয়েছেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কারও মদত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, এদিন সকাল সাতটা নাগাদ ছাদে গিয়েছিলেন যামিনীদেবী। তিনি গাছ ভালবাসতেন। ছাদের টবে তুলসি, দুর্বা, টগর-সহ বিভিন্ন গাছ ছিল। নিজে দেখভাল করতেন গাছগুলিকে। দেশাই পরিবার সূত্রে খবর, এদিন সকালেও তিনি ছাদে উঠেছিলেন গাছগুলিকে দেখতে। পরিচারক প্রেম মণ্ডলকে সিঁড়ি আনতে বলেছিলেন। মালকিনের কথায় প্রেম নিচে এসেছিল। সেইসময়ই আচমকা নিচে পড়ে যান বৃদ্ধা। আর্লে স্ট্রিটে কয়েকটি ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে ছিল। ফ্ল্যাটের সামনে একটি গাছের উপর বৃদ্ধা পড়ে যান বলে, ট্যাক্সি চালকরা জানিয়েছেন। বুদ্ধেশ্বর হালদার নামে এক চালক বলেন, “আমরা বসে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ শব্দে দৌড়ে গিয়ে দেখি বৃদ্ধা পড়ে আছেন। আমরা চিৎকার করি। ওপর থেকে বাড়ির লোক উঁকি দিচ্ছিলেন। অন্তত দশ মিনিট পরে তাঁরা নামেন।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কাছেই রয়েছে শিশুমঙ্গল হাসপাতাল। আহত বৃদ্ধাকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ফের ওপরে তোলা হয়। অনেক পরে পুলিশ এসে বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রায় বছর পাঁচেক আগে ফ্ল্যাট কিনে ওই পাড়াতে আসে দেশাইরা। পেশায় ব্যবসায়ী দেশাই পরিবার স্থানীয়দের সঙ্গে খুব একটা মিশত না। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস জনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন যামিনীদেবী। কয়েকদিন আগে এমআরআইও করা হয়েছে। পুলিশের একটি অংশের প্রাথমিক অনুমান, অসুস্থতার কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ওই বৃদ্ধা। এর জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। অন্যদিকে পারিবারিক কোনও অশান্তির জেরে এই মৃত্যু কিনা তাও জানার চেষ্ট চলছে। টাকার লোভে যামিনীদেবীকে খুন করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে নেমেছে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.