প্রতীকী ছবি।
কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: করোনায় মৃত্যুতে ফের অমানবিকতার ছবি প্রকাশ্যে এল শহর কলকাতায়। অক্সিজেনের (Oxygen) অভাবে ঘুরে ঘুরে মাঝপথে অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু হয়েছে বাগুইআটির (Baguiati) রঘুনাথপুরের প্রবীণ বাসিন্দার। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স চালকও মৃতদেহ সোজা বাড়ির সামনে নামিয়ে চম্পট দেয়। মাঝপথে মৃত্যু হওয়ায় চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেট দিতে রাজি নন। ফলে বৃহস্পতিবার সন্ধের দিকে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর এখনও সৎকারের ব্যবস্থা হয়নি। এমন সংকটকালে কারও সাহায্যই কার্যত পাচ্ছেন না তাঁর স্ত্রী, যিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত। এ নিয়ে শুক্রবার সকালে চাঞ্চল্য ছড়াল বাগুইআটিতে। পরে অবশ্য বাগুইআটি থানার পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ। রঘুনাথপুরের বাসিন্দা প্রাক্তন রেলকর্মী ও তাঁর স্ত্রীর দিন দুই আগেই করোনা (Coronavirus)পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তাঁদের একমাত্র পুত্র কর্মসূত্রে থাকে পুণেতে। এখানে একাই থাকেন প্রবীণ দম্পতি। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ আচমকাই প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয় গৃহকর্তার। বিপদের সময়ে বেশি টাকা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে স্বামীকে হাসপাতালে ভরতি করানোর জন্য বেরিয়ে পড়েন করোনা আক্রান্ত স্ত্রী। কিন্তু একাধিক হাসপাতালে ঘুরেও কোনও সুরাহা হয়নি। হাসপাতালগুলি মুখে ফিরিয়েছে, অক্সিজেনেরও ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় মাঝপথে অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু হয় প্রাক্তন রেলকর্মীর।
এরপর সমস্যা আরও বাড়ে। অ্যাম্বুল্যান্স চালক কোনও ঝুঁকি নেননি। মৃতদেহ নিয়ে সোজা বাগুইআটির রঘুনাথপুরের বাড়িতে পৌঁছে দেয় দেহ। তারপর থেকে দেহ সৎকারের উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না স্ত্রী। মাঝপথে মৃত্যু হওয়ায় চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেট দেননি বলে অভিযোগ। মৃত স্বামীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার অসহায়ভাবে রাত কাটিয়েছেন স্ত্রী, তিনি নিজেও অসুস্থ।
করোনায় মৃত্যুর পর দেহ এভাবে বাড়িতে পড়ে রয়েছে, শুক্রবার সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শোরগোল শুরু হয়। খবর পাঠানো হয় বাগুইআটি থানায়। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখে হস্তক্ষেপ করে। নিয়ম অনুযায়ী, ডেথ সার্টিফিকেট দিতে হবে ওই চিকিৎসককেই। পুলিশের মাধ্যমে তা বোঝানোর পর তিনি রাজি হন। ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পেলে পুলিশ উদ্যোগ নিয়ে দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। এদিকে, দম্পতির পুত্র পুণে থেকে এখনও এসে পৌঁছতে পারেননি। ফলে পুলিশ, প্রতিবেশীদের সাহায্য না পেলে কার্যত দিশেহারা পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারেন বৃদ্ধা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.