ছবি: ফাইল
সন্দীপ চক্রবর্তী: গত বছরের পুজোয় বালিগঞ্জে (Ballygunge)একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোয় সবুজ পাঞ্জাবি পরেই উজ্জ্বল ছিলেন ‘চিরসবুজ’ সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। বিশাল ঝাড়বাতির নিচে ধুতি-পাঞ্জাবি পরে ‘সংকল্প’ করেছিলেন সাবেকি দুর্গাপ্রতিমার সামনে। লালচে আসনে হাঁটু মুড়েই। একডালিয়ায় এবারও সংকল্প হবে। তিনি না থাকলেও তাঁর নামেই পুজোর সংকল্প হবে। সুব্রত তো একডালিয়ায় চিরজাগরূক। ক্লাব সদস্যরা তাঁকে ছাড়া পুজোর ব্যঞ্জনা ভাবতেও পারেন না, তাই এটাই সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। তিনিই যে মায়ের বেনারসি পছন্দ করে কিনে আনতেন।
তবে যেহেতু মুখোপাধ্যায় পরিবারে কাল অশৌচ, নিয়মের বেড়াজালে সংকল্প করতে পারবেন না সুব্রত-ঘরনি ছন্দবাণী। তাই এবার পুরোহিত মশাই নিজেই সুব্রতদার নামে সংকল্প করবেন। যে আসনে বসে প্রতিবার পুজোর প্রতিদিন সংকল্প করতেন, সেই আসনটাতেই রাখা থাকবে হাস্যমুখ সুব্রতর ছবি। যে ছবি রাখা থাকবে মা দুর্গার (Durgapuja)পায়ের ঠিক নিচে। বালিগঞ্জ একডালিয়ার ক্লাবের বাড়িটি এখন শুধুই সুব্রত মুখোপাধ্যায় স্মৃতি ভবন। দীপাবলির রাত কেড়ে নিয়েছে বঙ্গ রাজনীতির ইদানীংকালের বর্ণময় চরিত্রকে। এখনও বালিগঞ্জ জুড়েই পরতে পরতে ফিচেল হাসিতে জনপ্রিয় মানুষটির ছোঁয়া।
সেখানে ক্লাবের প্রতিটি সদস্য ভাবতেই পারছেন না যে সুব্রতদা আর ইহলোকে নেই। পুজো কমিটির সম্পাদক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সুব্রতদা নেই, এটা কে বলল? তিনি তো সবসময় আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। সুব্রতদা ছাড়া আমরা পুজো ভাবতেও পারি না। আমরা প্রতিদিনই ভাবি, তিনি হয়তো বাইরে কোনও মিটিংয়ে গিয়েছেন। এসেই বলবেন, কী ব্যাপার তোদের? পুজোর কাজ কদ্দূর এগোল?’’ হয়তো বা এসেই বলবেন, ‘চল, একটু ক্যারম খেলি।’
সুব্রত মুখোপাধ্যায় এতটাই ক্লাবের যে, তাঁর নামেই হবে পুজোর সংকল্প। বস্তুত, তাঁকেই উৎসর্গ করা হচ্ছে। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘আর কারও নামে আমাদের পুজোর সংকল্প হবে, এটা আমরা ভাবতেও পারি না।’’ এভাবে কোনও মৃত ব্যক্তির নামে সংকল্পের বিষয় সচরাচর শোনা যায় না। একডালিয়ায় যে চেয়ারটিতে বসতেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দুঁদে নেতা, সেই চেয়ার ও তাঁর ব্যবহার্য সামগ্রী সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। দোতলার ঘরটিতেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নামে সংগ্রহশালা তৈরির কাজ এগোচ্ছে। পুজোর পরই সেই সংগ্রহশালার উদ্বোধন হবে।
এবার ৮০তম বর্ষ। এবারও উদ্বোধন হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) হাত ধরে। প্রতিবার থিম সুব্রত ঠিক করে যেতেন। কিন্তু এবার সেই সুযোগ হয়নি। দীপাবলির রাতেই আচমকা চলে যান সুব্রত। তার পর থেকে শুধুই শূন্যতা। গুজরাটের সরস্বতী মন্দির তৈরিতে হাত লাগিয়েছেন প্রতিবারের শিল্পীরাই। বাজেট সামান্য হলেও বেড়েছে। আসছে সেই বিশাল ঝাড়ও। পুজো হবে আড়ম্বরেই। সুব্রতদা যে পুজো বন্ধের কথা কল্পনাতেও ভাবতেন না। সুব্রতদা যে সাবেকি পুজোতেই বিশ্বাস করতেন। তাই পুজো বন্ধের কথা মাথাতেও আনেনি ক্লাব।
প্রয়াত মন্ত্রী-প্রাক্তন মেয়রের দীর্ঘদিনের সঙ্গী স্বপন মহাপাত্র বা অন্য সদস্যরা মানেন, পুজোর দিনগুলিতেও সুব্রত থাকবেন সেই একডালিয়াতেই। ষষ্ঠীর বোধন থেকে সেই আসনেই ঠায় বসে থাকবেন তিনি। মণ্ডপের প্রতি কোনায় থাকবে তাঁরই ছবি। বস্তুত, এবারের একডালিয়ার পুজো সুব্রতময়, চারধারে তারই উপকরণ। সুব্রতই নৈবেদ্য। সংকল্পে সুব্রত-তর্পণ। শুধু পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির ফর্সা চেহারার মানুষটা চিরাচরিত হাসি নিয়ে সশরীর থাকবেন না। এটাই যা। না হলে তো একডালিয়ার পুজো সুব্রত মুখোপাধ্যায়েরই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.