নব্যেন্দু হাজরা: হুঁশ ফিরিয়েছে পোলবা কাণ্ড। সেই কারণেই বেপরোয়া স্কুলবাস এবং পুলকারকে বাগে আনতে নতুন নীতি নির্দেশিকা চালু করতে চলেছে রাজ্য পরিবহণ দপ্তর। এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি)-ও তৈরি করা হবে বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবারই স্কুল শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে পরিবহণ দপ্তরের বৈঠক হওয়ার কথা। পুলকারে পড়ুয়ারা কীভাবে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে, তার নিয়মকানুন ঠিক হবে সেখানেই। পাশাপাশি বে-আইনি পুলকার ধরতে সোমবার থেকে শুরু হবে অভিযান।
জানা গিয়েছে, বিভিন্ন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন পরিবহণ দপ্তর ও পুলিশের অফিসাররা। পুলকার এসে পড়ুয়া নামানোর পর গাড়ির হাল-হকিকত খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। নিয়ম ভেঙে ছাত্রছাত্রী নিয়ে গাড়ি ছুটলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। পরিবহণ দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ছোট ছোট শিশুদের জীবনের সঙ্গে কোনও আপস নয়। নিয়ম না মানলে এবার ধরপাকড় হবে। দপ্তরসূত্রে খবর, কলকাতাতেই ১৫৩ স্কুলের ৮৩৭ স্কুলবাস ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই পড়ুয়া নিয়ে ছুটছে। পুলকারের সংখ্যা আরও বেশি।
স্কুলবাস এবং পুলকার সংক্রান্ত নয়া নির্দেশিকায় কী থাকছে? পরিবহণ দপ্তরসূত্রে খবর, সমস্ত স্কুলবাস এবং পুলকারকে এবার নিয়ম অনুযায়ী হলুদ রং করতে হবে। প্রাইভেট গাড়ির লাইসেন্সে যাতে কেউ আর স্কুলের বাচ্চাদের না নিয়ে যেতে পারে তাই এই ব্যবস্থা। প্রত্যেক গাড়িতে রাখতে হবে অ্যাটেনড্যান্টও। সিএফ ছাড়া গাড়ি বাতিল হবে। বাচ্চাদের ওঠা-নামা করার জন্য নির্দিষ্ট মাপের সিঁড়ি থাকতে হবে। জানালার কাঁচও কীরকম হবে তা ঠিক করে দেবে পরিবহণ দপ্তর। স্কুলবাসের চালক সম্পর্কিতও যাবতীয় নথি জমা দিতে হবে। তাঁর ন্যূনতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আপাতত নির্দেশিকার ড্রাফট তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার স্কুল শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে ফাইনাল নির্দেশিকা গাইডলাইন বেরোবে।
শহর-শহরতলিজুড়ে বে-আইনি পুলকার এবং স্কুলবাসে চড়েই নিত্য ঝুঁকির যাতায়াত করে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী। কোনও গাড়ির বছরের পর বছর সিএফ ফেল থাকে। যেখানে সেখানে স্কুলের বাচ্চাদের নামিয়ে করা হচ্ছে গাড়ির বদলও। কোথাও কোথাও বদলে যান চালকও। অথচ সেই গাড়ি ধরলেও তা আটক করা যায় না। চেকিংয়ের সময় গাড়িতে থাকা কচিকাঁচা পড়ুয়াদের অসুবিধার দোহাই দিয়েই সাত খুন মাফ করে ফেলে গাড়ির চালকরা। আর এভাবেই চলে ঝুঁকির যাত্রা। ছাত্রছাত্রীদের সময়ে স্কুলে পৌঁছনোর বিষয়টিকেই ‘ঢাল’ হিসাবে ব্যবহার করছে তারা। অনেকক্ষেত্রে গাড়িতে উপস্থিত অভিভাবকরাও তাদের পাশে দাঁড়ান। আর তাঁদের কথাতেই বাধ্য হয়েও বে-আইনি গাড়ি হলেও তা ছাড়তে বাধ্য হয় পুলিশ।
বলতে গেলে কিছু অভিভাবকের এহেন ‘সহমর্মী’ মনোভাবকে হাতিয়ার করেই একশ্রেণির গাড়িমালিক বেআইনি পুলকারের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে আক্ষেপ দানা বেঁধেছে পরিবহণ দপ্তরের অন্দরে। “যাঁদের জন্য করা, তাঁরাই বুঝছেন না! ওঁদের ছেলেমেয়েদের জীবন যে দিনদিন বিপন্ন হয়ে উঠেছে, সেটা অভিভাবকরা না বুঝলে খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”-মন্তব্য এক পরিবহণ কর্তার।
পরিবহণ দপ্তরের কর্তাদের দাবি, গাড়ি চেকের সময় ছাত্রছাত্রীদের দেখিয়ে বলা হচ্ছে স্কুলে তাঁরা যাবে কীভাবে! আবার স্কুলে পৌঁছনোর পর গাড়ি ধরলে চালকরা জানায়, গাড়ি আটকালে স্কুল থেকে পড়ুয়ারা বা়ড়ি ফিরবে কী করে? দিনের পর দিন একই অজুহাতে গাড়ি আটকানো যাচ্ছে না। শুধু কি আনফিট গা়ড়ি! বাণিজ্যিকভাবে চালানোর কোনও ছাড়পত্র নেই শহরে চলা একটা বড় অংশের গাড়ির। কিন্তু প্রাইভেট গাড়ির লাইসেন্স নিয়ে দিব্যি ছাত্রছাত্রীদের আনা-নেওয়া করছেন বহু মালিক। পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক আরুপম দত্ত বলেন, “আমরা কলকাতা পুলিশকে জানাচ্ছি, একসাথে একটা সেমিনার করি। পুলকার এবং স্কুলবাস নিয়ে একটা গাইডলাইনের প্রয়োজন। চালকদের বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে। অভিভাবকরাও সব কিছু যাচাই করে তবে বাচ্চাদের পুলকারে তুলুন।” এইপথে হেঁটেই সমস্যা সমাধান বলে মনে করছেন অনেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.