অর্ণব আইচ: এবার ইডির নজরে অয়ন শীলের ঘনিষ্ঠ এক রাজনৈতিক নেতা। ওই নেতা অয়ন শীল ও কুন্তল ঘোষের এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন বলে অভিযোগ ইডির। সেই সুবাদেই অয়ন (Ayan Shil) কুন্তল ঘোষের নির্দেশে ওই এজেন্ট তথা নেতাকে ২৬ কোটি টাকা দেন। এই নেতার সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে বহু প্রভাবশালীর। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে এবার ওই নেতাকে জেরা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। তাঁর বিরুদ্ধে ইডি আইনি ব্যবস্থাও নেবে বলে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলবার ব্যাংকশালের ইডি আদালতে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত অয়ন শীলকে তোলা হয়। অভিযুক্তর আইনজীবী সঞ্জীব দাঁ ও অন্যরা আদালতে বলেন, অয়নের কাছ থেকে অতিরিক্ত ওএমআর শিট (OMR Sheet) উদ্ধার হয়েছে মাত্র। তাঁর মা, বাবা, স্ত্রী ও ছেলেকে জেরা করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে নতুন করে পাওয়ার কিছু নেই। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আদালতে জামিনের বিরোধিতা করে জানান, অভিযুক্ত অয়নের নামে ও বেনামে ২০টি ফ্ল্যাট, পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ির হদিশ মিলেছে। ৫০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতির ওএমআর শিট বিকৃতি করে প্রভাবশালীদের মদতে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দিয়েছেন অয়ন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে অয়ন শীলকে ৮ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
ইডির (ED) সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি অয়ন শীলের স্ত্রী কাকলি ও ছেলে অভিষেক শীলকে জেরার পর দু’জনই দাবি করেছেন যে, অয়নের দুর্নীতির কার্যকলাপ সম্পর্কে তাঁরা কেউ কিছুই জানতেন না। দিল্লির ছাত্র অভিষেক ও তাঁর বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে যৌথভাবে যে পেট্রোল পাম্প, রেস্তোরাঁ, বেসরকারি সংস্থা, একাধিক সম্পত্তি বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেই সম্পর্কে অভিযেক কিছুই জানতেন না বলে তাঁর দাবি। ইডিকে অভিষেক জানান, তাঁর বাবা যেভাবে সই করতে বলেছেন, তিনি সই করে দিয়েছেন মাত্র। আয়কর রিটার্ন (IT) সম্পর্কেও কিছু জানেন না তিনি। এই ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে এই সপ্তাহেই ইমন গঙ্গোপাধ্যায়কে ইডি সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের দপ্তরে তলব করেছে। তিনি তাঁর বাবা প্রাক্তন সরকারি কর্তা বিভাস গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাজিরা দেবেন বলে ইডিকে জানিয়েছেন।
ইডি অয়নের কয়েকজন কর্মচারীকে জেরা করে জানতে পারে, যে কুড়িটি ফ্ল্যাটের হদিশ মিলেছে, সেগুলির মধ্যে কয়েকটি দিল্লি, কামারহাটি ও হুগলিতে। বাকিগুলি অয়নের নিজের রিয়্যাল এস্টেট সংস্থার তৈরি করা। হুগলিতেই ‘এবিএস’ নামে একটি আবাসন তৈরি করেন অয়ন। সেখানে ৩৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগই ৬ কোটি টাকা দিয়ে অয়ন নিজেই বেনামে কেনাবেচা করেন। আসলে আবাসনের একটি ফ্ল্যাটও অন্য কারও কাছে বিক্রি হয়নি। কেনাবেচা দেখিয়ে অয়ন নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল কালো টাকা সাদা করেছেন। যাতে পরবর্তীকালে সম্পত্তি আটক করা না যেতে পারে, তার জন্যই অয়ন এই কৌশল নেন। উদ্ধার হওয়া পাঁচটি গাড়ি একটি এজেন্সি থেকে কেনা হয়। এর মধ্যে একটি স্ত্রী কাকলি শীল, একটি বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তী, বাকি তিনটি অয়নের নিজের সংস্থার নামে বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.