অর্ণব আইচ: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে আরও তৎপর ইডি। বাড়ি, অফিসে তল্লাশির পর এবার মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে তলব এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। আগামী ২০ অক্টোবর তলব করা হয়েছে তাঁকে। তবে ইডি’র তলবে সাড়া দিয়ে তাপস হাজিরা দেবেন কিনা, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।
ইডি’র একাধিক টিম শনিবার সকাল থেকে কলেজ স্কোয়ার, আমহার্স্ট স্ট্রিট, রাজাবাজার, মহিষবাথান, বারাসত, কৈখালি-সহ আটটি জায়গায় অভিযান চালায়। এর মধ্যে বারাসতের দেবীপুরে তাপস মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তির বাড়ি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। নিউটাউনের মহিষবাথান ও কলেজ স্কোয়ারে রয়েছে দু’টি অফিস। তবে সব জায়গায় শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্লাস নেওয়া হত বলে খবর। আমহার্স্ট স্ট্রিটের একটি বহুতলে ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। ওই ফ্ল্যাটটি বিভাস অধিকারী নামে বীরভূমের তৃণমূল নেতার। যিনি দু’দিন আগেই তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। ওই ব্যক্তিও মানিক ঘনিষ্ঠ বলে দাবি ইডি আধিকারিকদের। মিনার্ভা এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ও কামাখ্যা এডুকেশন নামে দুটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে ক্লাস নেওয়া হত। ইডি’র অভিযোগ, কেন্দ্রগুলি তৈরির ব্যাপারে তাপসবাবুকে সম্পূর্ণ মদত জোগান মানিক নিজেই।
মহিষবাথানের অফিস তালাবন্ধ ছিল। তাই চাবিওয়ালার সাহায্যে প্রায় ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় তালা ভেঙে, শাটার খুলে অফিসের ভিতরে ঢোকেন তদন্তকারীরা। একইভাবে বারাসতের দেবীপুরে বাড়িটির গেট ভিতর থেকে বন্ধ ছিল বলে পাঁচিল টপকে ঢুকতে হয় ইডি আধিকারিকদের। অন্য অফিসগুলিও বন্ধ থাকায় প্রথমে অসুবিধা হয় ইডি’র। এই কেন্দ্রগুলি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর নথিপত্র, ব্যাংকের স্লিপ, ফর্ম, খামের ভিতর থাকা প্রচুর চিঠি। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চিঠিও উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি ইডির। বহু ছাত্র-ছাত্রীর নাম ও ছবি পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন কি না, তার খোঁজ নিচ্ছে ইডি।
কেন্দ্রগুলিতে প্রচুর ছবি দেওয়ালে লাগানো থাকত। তাপস মণ্ডল ছাড়াও মানিক ভট্টাচার্য ও আরও কয়েকজন প্রভাবশালীর ছবি দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হত যে, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রভাব ও ক্ষমতা কত দূর। এমনও জানা গিয়েছে যে, কোনও চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর তাঁকে বলা হত, তিনি যদি কোনও চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে আসেন, তবে তাঁকে কমিশন দেওয়া হবে। এভাবে এই কেন্দ্রগুলির নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ত। ইডি আধিকারিকদের মতে, এই অফিসগুলিতে বসেই নিয়োগ দুর্নীতিতে আর্থিক লেনদেন হত। কেন্দ্রগুলির শিক্ষকদের সন্ধান চলছে।
শুক্রবার বারাসতের বাড়িতে ছিলেন না তাপস। স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায় বছর কুড়ি আগে বারাসত পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাঠোর রোডের দেবীপুরের একটি টিনের চালাঘরে স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন তাপস মণ্ডল। ২০১১ সালের পর এই বাড়ির অদূরেই কামাখ্যা বালক আশ্রমের পাশে জমি কিনে আরেকটি দোতলা বাড়ি তৈরি করেন তিনি। এলাকাবাসীর সঙ্গে তাপস মণ্ডলের পরিবারের খুব একটা মেলামেশা ছিল না। ইদানীং তাপস নিয়মিত বাড়িতে থাকতেন না। প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে তাপসের স্ত্রী, ছোট ছেলে পুত্রবধূকে জেরা ও বাড়িতে তল্লাশি চলে। প্রচুর নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে বলে তল্লাশির শেষে জানান এক ইডির আধিকারিক। তাপসের ছোট ছেলে বিজু বলেন, ‘‘বাবা হরিদ্বারে আছেন। ইডির সঙ্গে সব রকমের সহযোগিতা করেছি। কিছু কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছে। বাবাকে ইডি তলব করেছে।’’ দু’টি মোবাইল ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.