অর্ণব আইচ: এজেন্টের মাধ্যমে হুগলির যুব নেতা কুন্তল ঘোষের টাকা যেত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্যর হাতে। সেই ‘প্রভাবশালী’ এজেন্টের খোঁজ চালাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। ইডির দাবি, রাজ্যজুড়ে এরকম প্রায় ৪০ জন এজেন্টের সন্ধান মিলেছে, যাদের সঙ্গে ‘প্রভাবশালী’দের সম্পর্ক রয়েছে।
এর আগেও সিবিআই (CBI) আদালতকে জানিয়েছে যে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এজেন্টদের ভূমিকা। এজেন্টরা যোগাযোগ করত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে। তাঁদের এজেন্টরা বোঝাত যে, একমাত্র টাকা দিয়েই চাকরি পাওয়া সম্ভব। কীভাবে বহু যুবক-যুবতী টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, সেই তথ্যও তুলে ধরা হত ওই ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের সামনে। তাঁরা রাজি হলে কয়েক দফায় একেকজনের কাছ থেকে এজেন্টরা বিপুল পরিমাণ টাকা নেয়। সেই টাকার কমিশন এজেন্টদের হাতে গেলেও বাকিটা যেত দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ‘প্রভাবশালী’দের হাতে।
সিবিআইয়ের দাবি, টাকা লেনদেনের রাস্তা সম্পর্কে তদন্ত করতে গিয়ে ধৃত ব্যক্তি ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং বৈদ্যুতিন রেকর্ড খতিয়ে দেখে ওই এজেন্টদের (Agent) সম্পর্কে সিবিআই নিশ্চিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই নিয়োগ দুর্নীতির এজেন্ট প্রসন্ন রায় ও তার সঙ্গী প্রদীপ সিংকে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে। একইভাবে ইডিও তদন্তের সময় খতিয়ে দেখে এজেন্টদের ভূমিকা। সেই কারণে প্রসন্ন ও প্রদীপকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার পরিকল্পনা করছেন ইডি আধিকারিকরাও।
কুন্তল ঘোষকে (Kuntal Ghosh) জেরা করার সময় ইডি-র গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে, মানিক ভট্টাচার্যর (Manik Bhattacharya)সঙ্গে কুন্তলের যোগাযোগ ছিল এক এজেন্টের মাধ্যমে, যে নিজেকে প্রভাবশালী বলেই পরিচয় দিত। আবার কুন্তল নিজেও ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তুলে দিতেন সেই এজেন্টের হাতে। ইডি জানতে পেরেছে, তাপস মণ্ডলের সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকলেও টাকা যেত ঘুরপথে। তদন্তকারীদের মতে, তাপসের কাছ থেকেও মানিকের এজেন্টরা টাকা নিতে আসত। তেমনই যে এজেন্টের মাধ্যমে কুন্তলের কাছ থেকে বিপুল টাকা মানিকের কাছে গিয়েছে, তাকেও শনাক্তকরণ করেছেন ইডি আধিকারিকরা। তার পরিচয় জেনে ইডি তাকে তলব করে। কিন্তু ওই এজেন্ট সাড়া দেয়নি।
এরপর ইডি তাঁর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে, ব্যক্তি পলাতক। একইভাবে কুন্তলের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) মধ্যে যোগাযোগও রাখত এজেন্ট। যদিও পরে কুন্তল একাধিকবার পার্থর বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে এসেছেন, ইডির এমনই অভিযোগ। ইডির কাছে আসা খবর অনুযায়ী, বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৪০ জন এজেন্ট রয়েছে, যারা মানিক ভট্টাচার্য বা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। আবার এজেন্টদের সঙ্গে কাজ করত বহু সাব এজেন্ট। ওই এজেন্টদের নামের তালিকাও ইডি তৈরি করছে। সেই অনুযায়ী তাঁদের তলব করে জেরা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.