অর্ণব আইচ: নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটে এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে বিতর্কের মুখে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। শুক্রবার ব্যাঙ্কশালে ইডির বিশেষ আদালতে ব্যবসায়ী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর বিরুদ্ধে ইডি চার্জশিট পেশ করে। ওই চার্জশিটের ৭৫ নম্বর পাতায় ইডি দাবি করে যে, সুজয়কৃষ্ণবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি চার্জশিটে এরকম বলেই থাকে। সেগুলিই ধ্রুব সত্য এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বহু ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় শাসকদল এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়ে এগুলি চাপিয়ে দেয়। বিচার প্রক্রিয়ায় তার প্রমাণ মেলে।’’
গ্রেপ্তারির ৫৯ দিনের মধ্যে ব্যবসায়ী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, তাঁর দু’টি সংস্থা ওয়েল্থ উইজার্ড, এস ডি কনসালটেন্সির বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে ইডি। মোট ৭৬০০ পাতার এই চার্জশিটে মূল সারমর্ম ১২৬ পাতার। এতে সাক্ষীর সংখ্যা ২১ জন। সুজয়কৃষ্ণর ঘনিষ্ঠ সিভিক ভলান্টিয়ার রাহুল বেরা-সহ অনেকের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর কুড়ি কোটি টাকার লেনদেন দেখানো হয়েছে। তাঁর তিন কোটি টাকার সম্পত্তিরও উল্লেখ করা আছে।
চার্জশিটে ইডি’র দাবি, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন তৎকালীন সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুজয়কৃষ্ণ অভিষেকের অর্থনৈতিক সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখাশোনা করতেন। মানিক ভট্টাচার্যর অফিসে গিয়ে সুজয়কৃষ্ণ তাঁকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা দেন। ইডির এই দাবিই সৃষ্টি করেছে বিতর্ক। ইডি’র মতে, অন্য এক অভিযুক্ত তাপস মণ্ডলকে জেরা করেই মিলেছে এই তথ্য। কিন্তু এই ব্যাপারে কোনও নথি ইডি’র কাছে রয়েছে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়াও চার্জশিটে ইডির দাবি, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের ৩২৫ জনের নামের তালিকা সুজয়কৃষ্ণর মাধ্যমে মানিক ভট্টাচার্যর কাছে পৌঁছেছিল।
মানিকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সুজয়কৃষ্ণর। ২০১২ ও ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীদের তালিকা সুজয়কৃষ্ণর মোবাইল নম্বর থেকে পাঠানো হয় মানিকের মোবাইলে। সুজয়কৃষ্ণ শিক্ষাদপ্তর অথবা কোনও রাজনৈতিক দলের পদে ছিলেন না। তবুও তাঁকে দলীয় অফিসে বসতে দেখা যেত বলে চাকরিপ্রার্থীরা তাঁদের সমস্যার সমাধানের জন্য মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। চার্জশিটে ইডির দাবি, এর থেকেই স্পষ্ট, শিক্ষা দফতরে সুজয়কৃষ্ণর কতটা প্রভাব ছিল।
চার্জশিটের ৯০ নম্বর পাতায় ইডির দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে বিধানসভা ভোটের টিকিট পেতে সাহায্য করেছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ইডির দাবি, ২০২১ সালের ১৩ জুলাই সুজয়কৃষ্ণর সংস্থা ওয়েল্থ উইজার্ড থেকে পাঁচ লাখ টাকা কুন্তল ঘোষের অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল। আবার ২০২০ সালে ওই সংস্থা থেকে সুজয়কৃষ্ণর অ্যাকাউন্টে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা গিয়েছিল। ওই সংস্থার ডামি ডিরেক্টর আসলে তাঁরই বেতনভূক কর্মচারী। চার্জশিটের ৮০ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে যে, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি সুজয়কৃষ্ণর সংস্থা এস ডি কনসালটেন্সির সঙ্গে একটি বেসরকারি সংস্থার চুক্তি হয়। সেই অনুযায়ী, পারিশ্রমিক হিসাবে বেসরকারি সংস্থাটি এক কোটি টাকা পায় সুজয়কৃষ্ণর সংস্থার কাছ থেকে। তাঁর অন্য সংস্থা ওয়েল্থ উইজার্ডের দশ টাকার শেয়ার তাঁরই আওতায় থাকা ন’টি সংস্থায় ৪৯০ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে ১০ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার কালো টাকা সাদা করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.