অর্ণব আইচ: আকাশে রঙিন তুবড়ির ঝলকানি। চারদিক ভরে উঠল রঙিন আলোয়। ‘বাজি’ পুড়ল। কিন্তু সামান্যতম বায়ুদূষণও হল না। এই ‘বাজি’ থেকে যে ধোঁয়াই বের হয় না। বায়ুদূষণ হবে কোথা থেকে? আক্ষরিক অর্থে ‘সবুজ দীপাবলি’। আতশবাজি ফাটানোর বদলে রং-বেরংয়ের লেজার শো-এ মেতে উঠল ফোর্ট উইলিয়াম। দূষণ এড়িয়েও যে বাজির আনন্দে মেতে ওঠা যায়, কালীপুজোর রাতে কলকাতার বুকে এই পথই দেখাল ভারতীয় সেনা। এই প্রথা ছিল বহুদিনের। ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতরে বসে দীপাবলি মেলা। এই বছরও ৪ থেকে ৬ নভেম্বর সেনা সদরের স্টেডিয়ামে জমে উঠেছিল এই মেলা। তাতেও বিক্রি হয়েছিল রঙিন আতশবাজি ও দীপান্বিতায় আলো জ্বালানোর জন্য রকমারি প্রদীপ ও মোমবাতি। গত বছর পর্যন্তও প্রথা অনুযায়ী দীপাবলির রাতে স্টেডিয়াম ভরে উঠেছিল আলোর রোশনাইয়ে। কেন্দ্রীয়ভাবে দীপাবলি উদযাপনের সময় রংমশালের রংবেরংয়ের আলো যেমন ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে, তেমনই আকাশ ভর্তি হয়েছিল ফুলের মতো আলোর মালায়। একের পর এক আলোর বাজি আনন্দে মেতে উঠতেন সেনাকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
[ফের শহরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন, তরুণীর ব্রেন ডেথ-এ প্রাণ পেল তিনজন]
প্রথা ভাঙা হল এই বছর। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত ফাটানো যাবে আতশবাজি। বেশি সময়ের জন্য আতশবাজি ফাটালেও ছড়িয়ে পড়বে বায়ুদূষণ। কিছুদিন আগে দীপাবলি উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে আতশবাজি প্রদর্শনী নিয়ে বৈঠকে ফোর্ট উইলিয়ামের কর্তারা স্থির করেন, এই বছর ‘সুবজ দীপাবলি’ পালন করবেন সেনাকর্মীরা। কিন্তু বাজিও ফাটবে আবার দূষণও হবে না, তা যে প্রায় অসম্ভব। তখনই আলোচনায় বেরিয়ে পড়ে সমাধান। ‘লেজার শো’ আয়োজন করলে বাজির প্রদর্শনীর মতো আনন্দও মিলবে। পুরো বিষয়টির মধ্যে থাকবে নতুনত্ব। কিন্তু ধোঁয়া না বের হওয়ার ফলে বায়ুদূষণ হবে না। আবার বাজির কাগজ, দড়ি, সুতলি, রকেটের কাঠির মতো বর্জ্যগুলি এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ার ফলেও দূষণ হয়। সেই দূষণও ‘লেজার শো’-এ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেই বৈঠক অনুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্ধকার নামার পরই ফোর্ট উইলিয়ামের মেজর ধ্যানচাঁদ প্যাভেলিয়নে শুরু হয় ‘লেজার শো’-এর মাধ্যমে ‘সবুজ দীপাবলি’ উপযাপন।
[সুপ্রিম নির্দেশে আশার আলো, দীপাবলির রাতে দূষণ কম কলকাতায়]
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দফায় হয় এই লেজার শো। সাত মিনিটের একটি লেজার শো-এ দেখানো হয় রামায়ণের কাহিনি। এ ছাড়াও আট মিনিটের একটি রংবেরংয়ের লেজার শো যেন আতশবাজিরই একটি অন্য রূপ। ধোঁয়া নেই। অথচ আগুনের মালার বদলে রঙিন আলো জানায় দীপাবলির শুভেচ্ছা। বাজির বদলে লেজারের মাধ্যমেই ফুটে ওঠে তুবড়ির আলো আর আলোর মালা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, দূষণ এড়াতে বেরিয়াম জাতীয় রাসায়নিক বাদ দিয়ে বাজি তৈরি করতে হবে। কিন্তু বেরিয়াম ছাড়া বাজি তৈরি করা খুব মুশকিল। তাই আতশবাজি থেকে দূষণের সম্ভাবনা থেকেই যায়। যদিও সেই ক্ষেত্রে ‘লেজার শো’ একদিকে আলোর বাজির বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। যদিও ‘লেজার শো’-র খরচ অত্যন্ত বেশি বলে এককভাবে এই শো আয়োজন করা সহজ নয়। কিন্তু একসঙ্গে অনেকে মিলে বা কোনও ক্লাব ‘লেজার শো’ আয়োজন করলে দূষণ অনেকটাই আয়ত্তে আনা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.