স্টাফ রিপোর্টার: গান্ধীজির জন্মদিনেই পথচলা শুরু করতে চলেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। আগামী দুই অক্টোবর সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে যুবভারতী স্টেডিয়াম পর্যন্ত গড়াবে মেট্রোর চাকা। ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীকে আনার চেষ্টা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সোমবার কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে বাবুল বলেন, “পুজোর আগেই প্রকল্পের একাংশে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। চেষ্টা হচ্ছে অক্টোবর দু’তারিখ থেকেই পরিষেবা শুরু করার।”
কাজের গতি দেখে মেট্রোর কর্মী-আধিকারিকদের সাধুবাদ জানিয়েছেন বাবুল। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের তৎপরতারও প্রশংসা শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মুখে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাবুল বলেন, “বেশ কয়েক বছর প্রকল্পের কাজে নানা জটিলতা দেখা দিলেও পরে রাজ্যের সহায়তাতেই সুরাহা হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এমন একটা কর্মযজ্ঞের সূচনার মঞ্চে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয় সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে হাজির করানোর চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইস্ট—ওয়েস্ট মেট্রো উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে তিনি ব্যস্ত মানুষ। তাই আসবেনই এমন কথা দেওয়া যাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিয়ম মেনেই আমন্ত্রণ জানানো হবে।”
এদিন সকালে প্রথমে কেএমআরসিএলের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে বাবুল হাওড়া ময়দান থেকে সুড়ঙ্গে ঢোকেন। কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন। প্রায় মাঝগঙ্গা পর্যন্ত আসেন। পরে কেএমআরসিএল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে করেন। জানান, ১৫ মার্চ থেকে নতুন প্রকল্পে আসা রেকে চালকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যাবে। কারণ নয়া রুট চিনতে, কোথায় গতি কমবে, বাড়বে, তা জানতে প্রায় ছ’মাস লাগবে। ফলে তাঁদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। নয়া রেক আসাও শুরু হয়ে যাবে দ্রুত।
মেট্রো সূত্রে খবর, সেক্টর ফাইভ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত মেট্রো পুজোর আগে চালু হবে। পাশাপাশি ফুলবাগান পর্যন্ত চালু হবে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। ফুলবাগান মেট্রোর কিছুটা অংশ মাটির তলা দিয়ে যাবে। তাই রুট তৈরিতে একটু সময় লাগবে। ফুলবাগান থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রো চলবে আরও এক বছর পর। এই অংশ চালু হবে ২০২০ সালের মার্চ মাসে। অন্যদিকে প্রকল্পের শেষ অংশ শিয়ালদহ থেকে হাওড়া ময়দান ট্রেন চলাচল শুরু করবে ২০২১ সালের জুন মাসে।
ঝালমুড়ি তত্ত্ব মনে করিয়ে বাবুল এদিন বলেন, “যে কোনও উন্নয়নেই কেন্দ্র-রাজ্যের সু-সম্পর্ক দরকার। না হলে তো কাজই করা যাবে না। এখানেও রাজ্য প্রকল্প এগোতে সাহায্য করেছে।”
ঠাকুর দেখা মেট্রো চেপে
১. সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু চলতি বছরের দুই অক্টোবর।
২. আগামী মাসের মধ্যেই রেক চলে আসছে। শুরু হবে ট্রায়াল রান।
৩. এই দূরত্বের মধ্যে থাকছে ছ’টি স্টেশন। সেক্টর ফাইভ, করুণাময়ী, সেন্ট্রাল পার্ক, সিটি সেন্টার, বেঙ্গল কেমিক্যাল ও সল্টলেক স্টেডিয়াম।
৪. ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সম্পূর্ণ রুটটি সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে হাওড়া ময়দানে।
৫. সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত চলাচলের পর বাকি রুট চালু হবে বেশ কয়েকটি ধাপে।
৬. স্টেডিয়াম থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত চালু হবে ২০১৯-এর মার্চ মাসে।
৭. ফুলবাগান থেকে শিয়ালদহ চলবে ২০২০ সালের মার্চ মাসে।
৮. শিয়ালদহ থেকে হাওড়া ময়দান ২০২১ সালের জুন মাসে। যাত্রাপথে পড়বে চারটি স্টেশন। ময়দান, হাওড়া স্টেশন, মহাকরণ।
৯. সেক্টর ফাইভ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত মেট্রো যাচ্ছে মাটির উপর থেকে। এরপর ফুলবাগানের আগেই পাতাল প্রবেশ। দূরত্ব ৫.৭৪ কিলোমিটার।
১০. ফুলবাগান থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত যাত্রাপথের দূরত্ব ১০.৮১ কিলোমিটার। এই দূরত্ব মেট্রো ছুটবে পাতালেই।
কাজের হাল
১. প্রথম ধাপের কাজ অর্থাৎ সেক্টর ফাইভ থেকে স্টেডিয়াম প্রায় শেষের পথে।
২. শিয়ালদহ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের কাজ চলছে।
৩. ময়দান থেকে কাজ শুরু হয়ে গঙ্গার তলায় সুড়ঙ্গ খুঁড়তে খুঁড়তে টানেল বোরিং মেশিন মহাকরণের দিকে এসেছে। আপাতত রাজভবনের কাছে আছে সেটি। মাস খানেকের মধ্যেই পৌঁছবে এসপ্ল্যানেডে।
৪. গঙ্গার পৃষ্ঠদেশ থেকে ৩০ মিটার তলা দিয়ে গিয়েছে সুড়ঙ্গ। দেশের মধ্যেই এই প্রথম কোনও মেট্রোর লাইন গহ্গার তলা দিয়ে যাচ্ছে।
নতুন প্রযুক্তি
১. দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যা রুখতে প্রতিটি স্টেশন থাকছে স্ক্রিন ডোর।
২. চালকহীন রেক আসছে। তবে এখনই সেগুলি চালকহীন হবে না।
৩. প্রতিটি স্টেশন থাকছে শৌচাগারের ব্যবস্থা।
ভাড়া বাড়বে
এখন মেট্রোর ন্যূনতম ভাড়া পাঁচ টাকা। নয়া মেট্রোট সেই ভাড়া সামান্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলেছে মেট্রো সূত্রে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.