ছবি: প্রতীকী
নব্যেন্দু হাজরা: লুপাসে আক্রান্ত গড়িয়ার বাসিন্দা রিনা সেন। বছর দুয়েক ধরে চিকিৎসা চলছে ভেলোরে। ৩ এপ্রিল চেক—আপে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনে তা আর হয়ে ওঠেনি। যে ওষুধ তিনি খান তাও পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। কারণ রাতারাতি উধাও হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন(hidroxicloroquina)। আর তাতেই রাতের ঘুম উড়েছে তাঁর পরিবারের। ওষুধ না পাওয়ার কথাটা যে চিকিৎসককে জানাবেন সে উপায়ও নেই। কারণ ভেলোরের যে হাসপাতালে তিনি যান, সেখানে ই—মেল (Mail) করে মিলছে না। তাই আশঙ্কায় সিঁটিয়ে তাঁর স্বামীও।
শুধু তিনি একা নন। করোনা জেরে প্রভাব পড়েছে আম আদমির চিকিৎসায়। ভেলোরে চিকিৎসা করাতে যাওয়া হাজার হাজার রোগীই এখন ঘোর সংকটে। করোনা আবহে ভেলোর যাওয়া বন্ধ। কিন্তু চেকআপের ডেট পার। কবে তা স্বাভাবিক হবে তাও জানেন না কেউ। পাশাপাশি যে ওষুধ তাঁরা এতদিন শহরের সাধারণ দোকানে পেতেন, তার অনেকগুলোই পাওয়া যাচ্ছে না। তাতেই ঘোর সমস্যায় তাঁরা। চিকিৎসককে বলে শারীরিক সমস্যা জানিয়ে যে ওষুধ নেবেন তারও উপায় নেই। ইমেল পাঠানো যাচ্ছে না সেখানে। হাসপাতালের নিয়ম মেনে যে কোনও পেশেন্টই তাঁর প্রেসক্রিপশন নম্বর দিয়ে সেখানে ই—মেল পাঠান। সেই মেল দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পুরনো ইতিহাস জেনে ওষুধ দেন। তার ফলে রোগী ভেলোর না যেতে পারলেও যথাযথ চিকিৎসা পেতে পারেন।
কিন্তু বর্তমানে এখানেও বেধেছে সমস্যা। কারণ মেল করে উত্তর মিলছে না কয়েকদিন ধরে। ভেলোরের হাসরপাতাল নিয়মিত মেল না দেখায় ভরে গিয়েছে মেলের ইনবক্স। চিকিৎসকদের একাংশের কথায়, আসলে দেশ—বিদেশ বহু জায়গা থেকেই ভেলোরে চিকিৎসা করাতে আসেন অনেকে। তাঁরা কেউই এখন আসতে পারছেন না। ফলে মেল করেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন। এই অতিরিক্ত মেল যাওয়ার ফলেই মেলের ইনবক্স হয়তো দ্রুত ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।
এই সমস্যাতেই পড়েছেন রিনাদেবী। তাঁর স্বামী শান্তনুবাবু বলেন, “২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্ত্রী`র জ্বর, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হয়। চিকিৎসার জন্য কলকাতার সমস্ত বড় হাসপাতালে যোগাযোগ করি। কিন্তু কেউই অসুখটা সঠিক ধরতে পারেনি। তারপর আমি স্ত্রীকে ভেলোর নিয়ে যাই। জানা যায় লুপাস (Lupus) হয়েছে।” প্রসঙ্গত, লুপাস একটি দীর্ঘমেয়াদী অটোইমিউন রোগ, যাতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যকর টিস্যুকে আক্রমণ করে। এই অসুখের কারণে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি সাধন হয়।
“যখন তখন যে কোনও সমস্যা দেখা যেতে পারে। রোদে বেরোতে পারেন না লুপাস রোগে আক্রান্ত রোগীরা। সেক্ষেত্রে তাঁদের স্কিন ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তবু ভেলোরের ডাক্তারবাবুদের ওষুধ খেয়ে একটু ভাল ছিলেন। অনেকবার চেক—আপে গিয়েছেন। ওষুধ বদলে দিয়েছেন স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বুঝে। এবার ৩ এপ্রিল যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাওয়া হল না। ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। হাসপাতালে ই—মেল করা যাচ্ছে না। কী যে হবে!”, আক্ষেপ করলেন শান্তনুবাবু। একই পরিস্থিতি হুগলির ভদ্রেশ্বরের সায়ক চট্টোপাধ্যায়েরও। লিভারের ব্যাধিতে আক্রান্ত। কলকাতায় চিকিৎসা করালেও সুস্থ হননি। তাই ভেলোর ছুটতে হয়েছে। এ মাসেই সেখানে চেকআপে যাওয়ার কথা ছিল, লকডাউনে তা বন্ধ। ওষুধ বদলাতে হবে কি না তাও বুঝতে পারছেন না তিনি। জানান, “ই—মেল তো যাচ্ছে না হাসপাতালে। ডাক্তারেরও মতামত পাওয়া যাচ্ছে না। কী যে করি! ওষুধ খাব না বন্ধ করব তা নিয়েই খুব চিন্তায় আছি।”
ভেলোরে চিকিৎসা করতে যাওয়া বহু বাঙালি রোগীরই ভবিষ্যত এখন অন্ধকারে। লকডাউন শেষ হলেও লাইনে থাকা এত রোগীর চিকিৎসা কীভাবে মিলবে সে উত্তরও অজানা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.