সুলয়া সিংহ: মর্ত্যের মেয়েকে নরক যন্ত্রনা দিয়ে কখনও স্বর্গের মাকে পূজার অর্ঘ্য তুলে দেওয়া যায় কি? দিলেও তাতে পবিত্রতা থাকে? এ বছরের শারোদৎসব কিন্তু এমনই কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ, খুনের ঘটনা গোটা সমাজের কাছে বড় ধাক্কা, নিঃসন্দেহে। যা অনেক ভাবনার জন্ম দিয়েছে। বাঙালির সেরা উৎসব এবার শুধুই আনন্দে গা ভাসানো নয়, নিজেকে নতুন করে চেনার, আত্মসমালোচনার সময়। এবারের দুর্গাপুজোর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে রয়েছে দুটি নাম – আর জি কর, অভয়া। বহু পুজোয় (Durga Puja 2024) সেই বার্তা থাকবে। সেভাবেই পুজোর আয়োজন করছেন তাঁরা। ভরসা রাখছেন বিচারব্যবস্থার উপর। ফোরাম ফর দুর্গোৎসব তাই বলছে, বিচারে জুড়োক মেয়ের ক্ষত। অনেকে এই বিশ্বাস রাখছেন, মায়ের পুজোয় মেয়ের ক্ষতর উপশম হবে।
ভবানীপুর ৭৫ পল্লি, টালা বারোয়ারি, রামজয় শীল লেনের শতদলের পুজোয় ঘুরেফিরে সেই বার্তা। শুধু উপস্থাপনা ভিন্ন। আর তাতেই পুজোর মরশুমে একে অপরের থেকে পৃথক হয়ে অদৃশ্য সুতোয় একসঙ্গে গাঁথা।
টালা বারোয়ারির এবারের পুজোর পোস্টারে যেমন লেখা – #Everyonewantsjustice. অর্থাৎ বিচারের দাবিতে এখানে উদ্যোক্তা আর দর্শকদের একাত্ম করে তোলার প্রয়াস উত্তর কলকাতার এই ক্লাবের। ভবানীপুর ৭৫ পল্লির বার্তা – আস্থা রাখুন, ভরসা রাখুন/ দোষীদের কঠোরতম শাস্তি চাই।
রামজয় শীল লেনের শতদল ক্লাব আবার ছবিতে ছবিতে বিচারের বার্তা দিয়েছে। তাদের মণ্ডপে আঁকা ছবিতে কোথাও মেয়ের মুখঢাকা, কোথাও তাদের উপর অত্যাচারের করুণ বর্ণনা। হুগলির একটি পুজো আবার নিজেদের পোস্টারে লিখেছে – দুর্গা বড় অসহায়। সেইসঙ্গে দুলাইনের কবিতা – ‘চাই না মোরা দিল্লি ঘটুক কিংবা কলকাতা/সভ্য সমাজ গর্জে উঠুক ভাঙতে নীরবতা।’ এভাবেই তাঁরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, অনুদান না ফিরিয়েও কীভাবে প্রতিবাদে থাকা যায়।
প্রতিবাদের ভাষা তো হরেক। বাঙালির সেরা উৎসবের আয়োজনও রকমারি। আর এই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের কথা একটাই – বিচার চাই। উৎসবের ব্যস্ততার মাঝেও সেই দাবি থেকে সরছেন না কেউ। ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে সোশাল মিডিয়া পোস্টেও সেই দাবিরই প্রতিফলন। তারা লিখেছে- ”চালচিত্র থাকলে খালি, ভালো কি লাগবে বাঙালির?/ বিচার জুড়োক মেয়ের ক্ষত/ পুজো ফিরুক আগের মতো।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.