নব্যেন্দু হাজরা: চৈত্রের উত্তাপে তেতেপুড়ে বাংলা। আর সেই উত্তাপ গায়ে মেখেই মা দুগ্গা চললেন আমেরিকা (USA)। আমেরিকার হাউস্টনের রামকৃষ্ণ মিশনে। আর তাই বৈশাখ না আসতেই পুজোর গন্ধ কুমোরটুলিতে। মূর্তি বাক্সবন্দি হয়ে শুক্রবারই প্লেনে চড়ে পাড়ি দিয়েছে প্রবাসে। লাল শাড়িতে মা যেন এক্কেবারে ঘরের মেয়ে। একচালা ঠাকুরের দু’পাশে দাঁড়ানো কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী। মা দুগ্গা ৬ ফুট লম্বা। তাঁর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সাড়ে পাঁচ ফুট চওড়া। পুরো প্রতিমাই বানানো হয়েছে ফাইবার দিয়ে। সঙ্গে জরির সাজ। আর উমার আমেরিকা যাওয়াকে কেন্দ্র করে কুমোরটুলিতে (Kumortuli) বৈশাখ না আসতেই পুজোর আমেজ।
প্রবাসে যাওয়া প্রতিমার বরাত পেয়ে পুজোর অনেক আগেই তা তৈরি করেন পটুয়াপাড়ার শিল্পীরা। তাই আমেরিকা, কানাডা, ইটালি, সুইডেন, দুবাইয়ে প্রতিমা যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে এখানকার শিল্পীদের ঘরে ঘরে। শিল্পী কৌশিক ঘোষের কথায়, ”প্রতিবারই অর্ডার আসে বিদেশ থেকে। তবে মাঝে দু’বছর করোনার কারণে কিছু অর্ডার কমেছিল। এবার আবার তা বেড়েছে। তাই আগেভাগেই কাজে হাত লাগাতে হয়েছে।” প্রতিমা তৈরি হয়ে গেলে তা রওনা হচ্ছে প্রবাসের উদ্দেশে।
প্রতিমার দাম প্রায় এক থাকলেও যাতায়াতের খরচ অনেকটা বেড়েছে বলেই জানান শিল্পী। তাঁর কথায়, মূলত জাহাজ এবং প্লেনে করেই বিদেশে যায় এই প্রতিমা। জাহাজের তিনগুণ খরচ হচ্ছে এবার প্লেনে নিয়ে যেতে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কেন ঠাকুর যাচ্ছে বিদেশে? শিল্পী জানান, এখন নিয়ে রেখে দেবেন ওখানকার উদ্যোক্তারা। পুজোর সময় পুজো হবে। গত দু’বছর তো লকডাউনের কারণে বহু জায়গায় পুজোও হল না। ঠাকুরও গেল না। তাছাড়া ওখানে তো আর বিসর্জনের দিন জলে ফেলা হয় না ঠাকুর। ওই ঠাকুরই আবারও পুজো হয়। ফলে পুজোর দু’দিন আগেই যে প্রতিমা ঢুকবে তেমন ব্যাপার নেই। আগেভাগেই তাই ঠাকুর রওনা হচ্ছে। ইটালি থেকে আমেরিকা, ব্রিটেন থেকে দুবাই। প্রতি বছরই পুজোর আগে প্রতিমা যায় কুমারটুলি থেকে। গত দু’বছর লকডাউন এবং করোনা পরিস্থিতিতে সেভাবে পুজো হয়নি বিদেশে। প্রতিমাও গিয়েছে কম। এবার তাই আগেভাগেই প্রতিমা নিয়ে নিচ্ছেন প্রবাসী বাঙালিরা। হাউস্টনের (Houston)রামকৃষ্ণ মিশনে প্রায় ন’বছর পর আবারও প্রতিমা যাচ্ছে বলে জানান শিল্পী।
কৌশিকের আঙিনায় দেখা মিলেছে আমেরিকার পথে পাড়ি দেওয়া ফাইবারের প্রতিমার। দেখলে কে বলবে, এই মা মৃন্ময়ী নন! মুখ জুড়ে ঢলঢল লাবণ্য। গায়ে গয়না, শাড়ি, মাথায় মুকুট। দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে দশপ্রহরণধারিণী। শিল্পীর কথায়, এখন একটু কাজের চাপ কম। তাই এখন অর্ডার এলে ভালোই আস্তে-ধীরে করে ফেলা যায়। কৌশিকবাবু মূলত প্রবাসের জন্যই প্রতিমা বানান। বললেন, “প্রতিবারই ইংল্যান্ড, দুবাই, ইতালি সিঙ্গাপুর থেকেও অর্ডার আসে। এবারও কথাবার্তা চলছে। আস্তে আস্তে কাজকম্মও এগোচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.