অর্ণব দাস ও কলহার মুখোপাধ্যায়: প্রতিটি দিন মৃত্যুর দিন, প্রতিটি তিথি বেদনাবহ। অন্তত এখন দিনযাপনের পল, অনুপল এমনই অন্ধকারাচ্ছন্ন, শোকাচ্ছন্ন। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাস্তার জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দমদমের বান্ধবনগরের দুই কিশোরী শ্রেয়া ও অনুষ্কার প্রাণহানি হয়। তারপর থেকে পরিবারের কাছে ক্যালেন্ডার সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন। রেড লেটার ডে বলতে আর কিছু নেই। সব দিনই কালো, মেয়ের মৃত্যুর তারিখ লেখা যেন। কী মহালয়া, কী অষ্টমী, কী বিজয়া দশমী – কোনওদিন আলাদা নয় আর। পুজো (Durga Puja 2021) তাই এই বাড়িতে কোনও আলাদা আবহ আনেনি এবছর।
কী করেই বা আলাদা আবহ আনবে এ বছরের পুজো? কারণ, ঘরের মেয়ে দু’টোই যে পুজো নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদগ্রীব হয়ে থাকত। প্রতি বছর পুজো এলেই কেনাকাটিতে মেতে উঠত অনুষ্কা এবং শ্রেয়া। এবছরও পুজোর কেনাকাটি শুরু করে দিয়েছিল তারা। শ্রেয়া কিনেছিল কালো রংয়ের হট প্যান্ট, লং ড্রেস। নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটি করতে ভালবাসত অনুষ্কা। ভেবেছিল এবার হট প্যান্ট, টি-শার্ট, সালোয়ার কিনবে।
পুজোয় খাওয়াদাওয়া নিয়েও অনেক পরিকল্পনা ছিল তাদের। চিকেন মোমো, বিরিয়ানি, আইসক্রিমে পেট ভরানোর কথা ভেবেছিল। প্রতি বছর তাই করত তারা। পরিবারের খুদে সদস্যের আবদারে বাধা দিতেন না পরিজনেরাও।
তবে ২২ সেপ্টেম্বর জমা জল পেরিয়ে পড়তে যাওয়ার সময়ই ঘটে অঘটন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় দুই বান্ধবী। প্রাণে বাঁচার চেষ্টা সফল হয়নি তাদের। দুই কিশোরীর প্রাণহানিতে পুজোর পরিকল্পনা পণ্ড। তাই তো নন্দী ও বণিক পরিবারের পুজো আজ বড্ড বেরঙিন। নেই ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া। নেই কেনাকাটা। দিনরাত নাতনিকেই খুঁজে যাচ্ছেন অনুষ্কার দিদা। কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি। শ্রেয়ার দাদুর মনের অবস্থাও একইরকম। উমা আবাহনে মেতেছে বাংলা। শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়ে এসেছেন বাপের বাড়ি। এক মেয়ে আবাহনের সময়েই কোল খালি অনুষ্কা ও শ্রেয়ার মায়ের। তাই তো পুজোর দিনেও বারবার চোখের জল মুছছেন তাঁরা।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.