অর্ণব আইচ: এবার পুজোয় ডিউটির সময়ও পুলিশের মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ লালবাজারের। এমনকী, কাঁধে নিজস্ব ব্যাগ নিয়েও যাতে কাউকে ডিউটি করতে দেখা না যায়, সেই ব্যাপারেও কড়া হচ্ছেন পুলিশকর্তারা। গত বছরের অক্টোবরে পুজোর পর ডিউটির সময় পুলিশের মোবাইল ব্যবহারে রাশ টানার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার। এবার লালবাজারের নির্দেশ, পুজোর ডিউটির সময় খুব প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না পুলিশকর্মীরা। সোমবারই লালবাজারের কর্তা, প্রত্যেক থানা ও ট্রাফিক গার্ডের ওসিদের নিয়ে বৈঠকে বসতে পারেন পুলিশ কমিশনার। সেখানেই পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন লালবাজারের কর্তারা।
এই বছর প্রায় চার হাজার পুলিশকর্মী অবসর গ্রহণ করেছেন। তাই পুলিশের সংখ্যা কম হলেও অন্তত দশ হাজার পুলিশ পুজোর ডিউটিতে রাস্তায় থাকছে। সঙ্গে অন্তত দশ হাজার ‘পুজো ভলান্টিয়ার’। এ ছাড়া থাকছেন হোমগার্ড ও সিভিক ভলান্টিয়াররাও। প্রত্যেকটি বড় পুজোর দায়িত্বে থাকছেন একজন করে ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিক। অন্য গুরুত্বপূর্ণ পুজো, যেখানে দর্শনার্থীদের ভিড়, সেখানে দায়িত্বে থাকছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদের কর্তা। ছোট পুজো মণ্ডপগুলিতেও প্রয়োজনে পুলিশ মোতায়েন করতে পারেন ডিভিশনের ডিসিরা। চতুর্থী থেকে নবমী টানা বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে রাস্তা ও মণ্ডপে পুলিশ মোতায়েন থাকছে। আবার রাত বারোটায় মোতায়েন হচ্ছে পুলিশের দ্বিতীয় ব্যাচ। ফলে দুঘণ্টা টানা ডিউটির পর পুলিশকর্মীরা যাতে একটু বিশ্রাম নিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্তাদের। সকাল আটটা থেকে বিকেল পর্যন্ত ডিউটিতে থাকবে কম সংখ্যক পুলিশ।
পুজোয় শহরের রাস্তায় থাকছে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ পিকেট। নিরাপত্তা ও নজরদারির জন্য রাস্তায় দু’বেলা থাকবে আটটি করে ১৬টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। এ ছাড়াও ৩০টি পুলিশ কন্ট্রোলরুম মোবাইল ও আরও পিসিআর গাড়ি টহল দেবে। ১৩টি কুইক রেসপন্স টিম কমব্যাট ফোর্স নিয়ে থাকবে রাস্তায়। অন্তত ১২টি জায়গায় পিসিআর ভ্যান তৈরি থাকবে আপদকালীন পরিস্থিতিতে দমকলকে এসকর্ট করতে। কলকাতার ন’টি ডিভিশনের বিভিন্ন রাস্তায় দর্শনার্থীদের সুবিধায় থাকবে মোবাইল পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট ভ্যান। প্রত্যেকটি ভ্যানের সঙ্গে থাকবে পুলিশের সিটি ওয়াচ বাইক। ১৪টি জায়গায় মোতায়েন থাকবে অ্যাম্বুল্যান্স ও ১৫টি জায়গায় ট্রমা কেয়ার। ন’টি ডিভিশনেই ‘বন্ধু কলকাতা’র গাড়ি নিখোঁজ হয়ে যাওয়া শিশু, প্রবীণদের উদ্ধার করবে।
শহরের ৪৫টি ওয়াচ টাওয়ারে বসে নাইট বাইনোকুলার নিয়ে নজরদারি রাখবেন থানা ও গোয়েন্দা দপ্তরের দু’জন করে পুলিশকর্মী। ২৭টি মেট্রো স্টেশনে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। প্রত্যেকটি বড় পুজোয় থাকবে ‘পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ’। মহিলাদের নিরাপত্তায় মধ্য, উত্তর, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতায় ২০টি মহিলা টিম ‘উইনার্স’-এর স্কুটিতে ৪০ জন মহিলা পুলিশকর্মী টহল দেবেন। প্রত্যেকটি পুজো মণ্ডপে ইভ টিজিং, পকেটমারি, ছিনতাই রুখতে থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ। ফুটপাথে হকাররা বসে যাতে পথচারীদের চলাচলে বাধার সৃষ্টি না করতে পারেন, সেদিকে নজর রাখবে পুলিশ।
সশস্ত্র বাহিনী ও নেতাজি ব্যাটালিয়নের আওতায় অতিরিক্ত কন্ট্রোলরুমে তৈরি থাকছে বাহিনী।লালবাজারের নির্দেশ, এবার বৃষ্টির সম্ভাবনা কম হলেও প্রয়োজনে সঙ্গে পুলিশকর্মীরা রেনকোট বা ছাতা রাখতে পারবেন। পুলিশের সুবিধার জন্য রাস্তায় থাকবে বারোটি মোবাইল টয়লেট ভ্যান। কালীঘাট মন্দির ছাড়াও বিড়লা মন্দির, একবালপুরের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, পরেশনাথ মন্দির, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, লেক কালীবাড়ি, ভূতনাথ মন্দির, ইসকন মন্দির, সায়েন্স সিটি, মিলেনিয়াম পার্ক, ইলিয়ট পার্ক, সিটিজেনস পার্ক, চিড়িয়াখানা, সাউথ সিটি মলের উপর বিশেষ নজর থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.