ছবি: শুভ্ররূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
নিরুফা খাতুন: অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পুজো। আট বছর পুজো (Durga Puja) হয়নি। সংখ্যালঘুদের উদ্য়োগে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে পুনরায় পুজো চালু হয়। তৌসিফ, ওয়াসিমদের নেতৃত্বে এবার এই পুজো তিন বছরে পা দিয়েছে। তবে এবার পুজোয় তৌসিফরা আরও একটি উদ্য়োগ নিয়েছে। পুজোর খরচ থেকে যে টাকা বাঁচবে, তা দিয়ে দুস্থ মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হবে।
কলকাতা পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মূলত অবাঙালি সংখ্যালঘু অধ্য়ুষিত এলাকা। এখানে হাতেগোনা কয়েক ঘর বাঙালি হিন্দু পরিবার রয়েছে। এঁরা আগে এখানে ছোট করে পুজো করতেন। আর্থিক কারণে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে শেষ পুজো হয়েছিল। ২০২১ সালে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের এই পুজো ফের চালু করার উদ্য়োগ নেন স্থানীয় সংখ্যালঘুরাই। খুঁটিপুজো থেকে শুরু মণ্ডপ সাজানো, প্রতিমা নিয়ে আসা সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এলাকার মুসিলমরাই।
ইদের শামিয়ানা যেখানে টাঙানো হত সেখানে এখন পুজোর (Durga Puja 2023) মণ্ডপ উঠছে। অবশ্য দুবছর আগে তাঁদের পুজোর কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। তখন প্রতিবেশী জয়ন্ত, শর্মিলারা তাঁদের সহযোগিতা করেছিলেন। এই দুবছরে অনেকটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সম্প্রীতির পুজো দেখতে গত বছর থেকে বিদেশিরাও এই মণ্ডপে আসছেন। এবার পুজোর বাজেট ও জৌলুস দুই বেড়েছে। প্রতিমাও থাকছে আগের তুলনায় বেশ বড়। পুজো উদ্য়োক্তা মুহম্মদ তৌসিফ রহমান বলেন, ‘‘উৎসবের কোনও রং হয় না। আর্থিক কারণে পুজো বন্ধ হয়েছিল। এলাকায় সংখ্যালঘুদের উদ্য়োগে ফের পুজো শুরু হয়েছে। পুজোর জন্য কোনও চাঁদা সংগ্রহ করা হয় না। পুরো খরচ এলাকার সংখ্যালঘুরাই বহন করেন। কুমোরটুলিতে সংখ্যালঘুরা গিয়ে প্রতিমা নিয়ে আসেন। পুরোহিত দিয়ে সন্ধিপুজো, কলাবউ স্নান, অঞ্জলি, ভোগ সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম মেনে করা হয়। ব্রাহ্মণ এনে ভোগ রান্না হয়। একসঙ্গে সেই ভোগ খাই। ইদের মতো এখন পুজোয়ও সবাই মিলে আনন্দ করি। বিসর্জনেও আমরা সকলে যাই। সম্প্রতির পাশাপাশি সমাজসেবাতেও রয়েছে এই সংখ্যালঘু পুজো কমিটি। গত বছর পুজোর বাজেট থেকে দুস্থ চার বাচ্চাকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছিল। এবার দুস্থ মেয়েদের বিয়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন আয়োজকরা।”
পুজো উদ্যোক্তা জানান, সর্বাধিক তিনটি মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব নেওয়া হবে। পুজোর খরচ থেকে যে টাকা বাঁচবে, তা দিয়েই বিয়ের আয়োজন করা হবে। এ ক্ষেত্রেও কোনও ধর্ম দেখা হবে না। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কিংবা আদিবাসী সম্প্রদায় যে কেউ আমাদের কাছে আবেদন করতে পারেন। এছাড়া পুজোর দিনগুলিতে মধ্যহ্নভোজের আয়োজন থাকছে। স্থানীয়দের সঙ্গে দর্শক, পথচারী, ভবঘুরে সকলের জন্য লাঞ্চের ব্যবস্থা থাকছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.