সুলয়া সিংহ: ঢাকের বাদ্যি, ধুনোর গন্ধ আর শঙ্খনিনাদে মনটা নেচে ওঠে। উৎসবে মেতে ওঠার ইচ্ছা করে তাঁদেরও। কিন্তু বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়া কাঁধগুলোর আর দুর্গাদর্শন হয়ে ওঠে না। ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থেকেই কেটে যায় পুজোর পাঁচটা দিন। বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ঠাকুর দেখতে পেলেন কি না, মায়ের সামনে হাত জোড় করে প্রার্থনা করতে পারলেন কি না, প্রসাদ মুখে উঠল কি না, এসব খেয়াল আর কে রাখে। পরিবার যে একা থাকার নিয়তিই রচনা করে দিয়েছে। কিন্তু এবার পুজোয় (Durga Puja 2023) ছবিটা খানিকটা হলেও বদলাতে চলেছে। মহালয়াতেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেবীদর্শনের ব্যবস্থা করছে কলকাতার অজেয় সংহতি।
দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর এলাকার অতি জনপ্রিয় এই পুজো প্রতিবছরই চমক দেয় তাদের বিষয় ভাবনায়। কিন্তু এবার শুধুই থিমের চাকচিক্য নয়, বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের মুখে হাসি ফোটাতে অনন্য উদ্যোগ নিয়েছে এই অজেয় সংহতি পুজো কমিটি। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অরিজিৎ নন্দীর কথায়, “কলকাতার পুজোর এখন নতুন ট্রেন্ড প্রিভিউ শো। আমরাও সেই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছি। তবে একটু অন্য রকমভাবে। আমরা ঠিক করেছি, মহালয়াতে কয়েক ঘণ্টার জন্য বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে মণ্ডপ। তাঁরা আসবেন, প্রতিমা দর্শন করবেন। নিজেদের মতো করে সময় কাটাবেন।” তবে শুধুই মায়ের দর্শন নয়, মণ্ডপে তাঁদের জন্য থাকবে ফুচকা স্টল-সহ মনোরঞ্জনের নানা ব্যবস্থা। খানিকক্ষণের জন্য হলেও যাতে তাঁরা নিজেদের ছোটবেলায় ফিরে যেতে পারেন, তাই এই ভাবনা। রাতে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও করবে পুজো কমিটিই।
পুজো আসে, পুজো যায়। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের রোজনামচায় কোনও বদল ঘটে না। একই স্রোতে জীবন বয়ে যায়। কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও তাঁদের জীবনকে রঙিন করার এ ভাবনা মিশে গিয়েছে অজেয় সংহতির এবারের থিম ভাবনার সঙ্গেও। গতানুগতিক জীবনের তথাকথিত খাঁচা থেকে বেরিয়ে প্রাণ খুলে বাঁচার বার্তা দেবেন শিল্পী অমর সরকার। আর তার আগে বৃদ্ধাশ্রমের চার দেওয়ালের বন্দি জীবন থেকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হবে আবাসিকদের।
তাঁদের মণ্ডপে আনার জন্য বিশেষ গাড়ির ব্যবস্থাও করা হবে। তাই সেদিন মণ্ডপে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। দেবীপক্ষের সূচনা লগ্নে ‘আপনজন হারা’ প্রবীণদের আশীর্বাদ নিয়েই এবারের পুজো শুরু করতে চায় অজেয় সংহতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.