ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলার দুর্গাপুজোকে (Durga Puja) ‘ইনট্যানজিবেল কালচারাল হেরিটেজে’র তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো (UNESCO)। এমন এক আন্তর্জাতিক সম্মান উদযাপনের জন্য এবছর একমাস আগে থেকে বাংলাজুড়ে শারদোৎসবের আমেজ। রাজ্য সরকার ওই সাফল্য নিয়ে অনুষ্ঠান করার পর থেকেই সাজ সাজ রব। এসবের নেপথ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) নিরলস উদ্যোগ। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘুম ভাঙল অনেক পরে। শনিবার সংস্কৃতি মন্ত্রক (Ministry of Culture) ভারতীয় জাদুঘরে দুর্গাপুজো নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। হাজির ছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দুর্গাপুজোয় ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পিছনে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকাই নেই বলে দাবি তুলল বিজেপি। পালটা মোদি সরকারের কৃতিত্বের কথাও উল্লেখ করলেন নেতারা।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় রং নীল-সাদার অনুপ্রেরণায় এ রাজ্যের বহু সরকারি ভবন, প্রকল্পেই দেখা যায় ওই রং। বিজেপি পরোক্ষে তা নিয়ে কটাক্ষ করে শনিবার নিজেদের অনুষ্ঠান কেন্দ্র সাজিয়েছিল গেরুয়া-সাদা রঙে। হাজির ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেত্রী মীনাক্ষি লেখি, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার (Subhas Sarkar)। মীনাক্ষি লেখির বক্তব্য, ”এতে রাজ্য সরকারের কোনও ক্রেডিট নেই। আগেও আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তা খারিজ হয়। এবার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, স্বীকৃতি মিলেছে।”
সুভাষ সরকার বলেন, ”এটা আমার, ওটা আমার নয় – এভাবে ভেদাভেদ করা ঠিক নয়।বড় হতে গেলে বড় হৃদয় দরকার পড়ে। ছোট হৃদয়ে হয় না। অতীতে কীভাবে এ রাজ্যে পুজোয় বাধা দেওয়া হয়েছে সকলে দেখেছেন। ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক সংগঠন।পশ্চিমবঙ্গ মেম্বার না। ভারত সরকার মেম্বার। কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করে নমিনেশনের কাজ। ২০২০ মার্চের মধ্যে পাঠানো হয়। বারবার এখানে বিসর্জনের দিন পালটে গিয়েছে এখানে। স্বীকৃতি পেতেই মুখ্যমন্ত্রী ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এসব বিষয়ে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। জন আধিকারিকের কোনও চিঠি নেই। একজন পরিশ্রম করল, আরেকজন একজন ক্রেডিট নেয়।”
দুর্গাপুজোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার কথাও উল্লেখ করলেন কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ”দিল্লির চাঁদনি চকের মতো অনেক জায়গায় পুজো নিয়ে কাজ করেন অনেকে। আমরা তাঁদের নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কলকাতাকে জুড়ে দাও। আমরা সেভাবেই জুড়ে কাজ করি। তারপর তা সর্বজনবিদিত হয়। দুর্গাপুজোয় আমি-তুমি নয়।
দুর্গাপুজোর সবার। গুজরাতের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কলকাতাকে সংযুক্ত করো। আমি বললাম, দিল্লির সিআর পার্ক, ওড়িশা – এমন অনেক জায়গায় দুর্গাপুজো হয়। কিন্তু মোদীজি বললেন, কলকাতাকে জুড়ে দাও।একমাত্র কলকাতায় বনেদি বাড়ির পুজো বারোয়ারি পুজো হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী তপতী গুহ ঠাকুরতা, সন্দীপন মিত্র, অঞ্জন ঘোষের নাম উল্লেখ করেন। তপতী গুহ ঠাকুরতাই প্রথম ইউনেস্কোর দরবারে দুর্গাপুজো ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেছিলেন। রেড রোডের মঞ্চে তাঁকে ডেকে সম্মাননার পাশাপাশি এর জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপির (BJP) এই অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে যে অভিযোগ উঠেছিল, তা খারিজ করে সুভাষ সরকারের দাবি, ”রাজ্যকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসেনি। প্রোটোকল অনুযায়ী আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল।রাজ্য সরকার কোনও প্রতিনিধি পাঠায়নি।” পুজোর ঠিক আগে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক তরজায় অসন্তুষ্ট আমবাঙালি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.