ফাইল ছবি
অর্ণব আইচ: ‘এত গয়না বেটি কোথায় পেলি?/সিংহীর উপর ধিঙ্গি হয়ে বাপের বাড়ি চলে এলি।’ দুর্গোৎসবের বোধনে প্রতিমার গায়ের গয়না দেখে গানটি রচনা করেছিলেন পুরাতন কলকাতার এক টপ্পা গানের রচয়িতা। পরে এই গানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গায়ক রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। শ্মশানবাসী শিবের পত্নী দুর্গা গয়না (Ornament) পরে সাজতে ভালবাসেন। তাই কলকাতার বেশিরভাগ বাড়ির পুজোয় দুর্গাপ্রতিমাকে গা ভরতি গয়না পরানো হয়। তবে বারোয়ারি মণ্ডপে এসেও মা সোনা ও রুপোর গয়নায় সেজে ওঠেন। আর সেখানেই সতর্ক পুলিশ।
লালবাজারের (Lalbazar) সূত্র জানিয়েছে, কলকাতার ১১টি মণ্ডপের দুর্গাপ্রতিমা সেজে ওঠেন গয়নায়। আর সেই কারণেই পুজোর সময় শুধু প্রতিমার গয়নার নিরাপত্তায় উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার ওই ১১টি মণ্ডপে থাকছে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা। ওই প্রত্যেকটি মণ্ডপেই শুধু প্রতিমার গয়নার নিরাপত্তার জন্যই অষ্টপ্রহর অস্ত্র (Arms) হাতে নজর রাখছে পুলিশের বিশেষ টিম। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, যেহেতু বারোয়ারি পুজো, সেই কারণেই ভাবনা। এই বছর বাইরের দর্শনার্থীরা মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবু প্রতিমার গয়নার উপর লোভ থাকতে পারে দুষ্কৃতীদের। খোলা মণ্ডপে যাতে প্রতিমার কোনও গয়না খোয়া না যায়, তার জন্যই থাকছে এই বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ১১টি মণ্ডপের মধ্যে মধ্য কলকাতার মুচিপাড়া এলাকার সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার ও উত্তর কলকাতার জোড়াবাগানের আহিরীটোলা সর্বজনীন পূজা মণ্ডপে শনিবার সকাল থেকেই বসেছে পুলিশের পাহারা। যতদিন না প্রতিমা বিসর্জন যাচ্ছে, ততদিন থাকছে এই প্রহরা। দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জের ম্যাডক্স স্কোয়্যারে শনিবার থেকে এই পাহারা শুরু হয়েছে। চলবে ১৭ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাটের একডালিয়া এভারগ্রিন পুজো মণ্ডপের ক্ষেত্রেও এই একই পুলিশি ব্যবস্থা থাকছে। আবার দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের বাদামতলা আষাঢ় সংঘ, মধ্য কলকাতার তালতলার তালতলা সর্বজনীন ও তালতলা সর্বজনীন শারদীয়া পুজো কমিটি, দক্ষিণ শহরতলির পঞ্চসায়র এলাকার নিউ গড়িয়া কো-অপারেটিভ দুর্গোৎসব, ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জি রোডের ২৩ পল্লির মন্দিরে রবিবার সকাল থেকে দশমীর সকাল পর্যন্ত থাকছে পুলিশের এই বিশেষ টিমের প্রহরা।
পূর্ব কলকাতার এন্টালির কামারডাঙা রোডের শারদীয়া প্রবর্তকের পুজো মণ্ডপে ষষ্ঠীর সকাল থেকে দশমীর রাত ও পূর্ব কলকাতার বেনিয়াপুকুর এলাকার বেনিয়াপাড়া লেনের বেনিয়াপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবের ক্ষেত্রে এই বিশেষ পুলিশ প্রহরা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। একাদশীর রাত পর্যন্ত থাকছে এই পুলিশি প্রহরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দু’জন পুলিশকর্মী রাইফেল নিয়ে দিনরাত পাহারা দেবেন। তালতলার একটি পুজো মণ্ডপের ক্ষেত্রে সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর (ASI), সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের ক্ষেত্রে রাইফেলধারী দুই পুলিশকর্মী ছাড়াও ছোট অস্ত্র নিয়ে থাকছেন দুই পুলিশ অফিসার। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, গয়নার নিরাপত্তার জন্য পুজো উদ্যোক্তারা পুলিশের কাছে আবেদন জানান। তারই ভিত্তিতে দেওয়া হয় এই নিরাপত্তা। এছাড়াও ওইসব গয়নার নিরাপত্তায় পুজো উদ্যোক্তারা বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীও নিয়োগ করেছেন। তার জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে একাধিক পুজো কমিটিকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.