সরোজ দরবার ও সুলয়া সিংহ: তিথি মেনে প্রতিবছর কৈলাস থেকে উমা আসে ঘরে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের (Durga Puja 2021) আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলার আকাশ-বাতাস। আর মৃন্ময়ী দুর্গাকে চিন্ময়ী রূপ দেওয়ার আঁতুড়ঘর কুমোরটুলিই সবার আগে ভরে ওঠে সেই পুজো পুজো গন্ধে। কিন্তু কালের নিয়মে প্রতিমা তৈরিতেও নানা বদল এসেছে। চাহিদা আর প্রত্যাশায় ভর দিয়ে আধুনিক হয়েছে পটুয়াপাড়াও। ভিনদেশে পাড়ি দেয় কুমোরটুলিতে তৈরি হওয়া প্রতিমা। কিন্তু মাটি নয়, বিভিন্ন কারণে বর্তমানে ফাইবার গ্লাসের তৈরি প্রতিমাই পাঠানো হচ্ছে বিদেশে। যে কাজ মৃৎশিল্পীদের কাছে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং।
মৃন্ময়ী মা কীভাবে চিন্ময়ী হয়ে ওঠে, কুমোরটুলিতে (Kumartuli) ঘোরাঘুরি করলে তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু কৌতূহল জাগে ফাইবার গ্লাসের মৃর্তি নিয়ে। কীভাবে নিখুঁতভাবে দেবী দুর্গাকে রূপ দেন শিল্পীরা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই কুমোরটুলির অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে সোজা পৌঁছে গিয়েছিলাম মৃৎশিল্পী প্রশান্ত পালের স্টুডিওতে। যাঁর একের পর এক প্রতিমা জল ও আকাশপথে পাড়ি দিচ্ছে এদেশ-ওদেশ। সবই ফাইবার গ্লাসের এক চালা প্রতিমা। কোনওটির উচ্চতা সাত ফুট তো আবার কোনওটি পাঁচ ফুট উচ্চতার বাক্সে বন্দি। লন্ডন, নেদারল্যান্ডস থেকে মার্কিন মুলুক- সর্বত্রই বিরাজমান প্রশান্ত পালের সৃষ্টি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল, ফাইবার গ্লাসের প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক প্রক্রিয়াটা মৃন্ময়ী মূর্তির মতো হলেও এক্ষেত্রে আরও বেশি খাটনি ও সময় লাগে।
প্রশান্ত পাল জানালেন, “মাটির প্রতিমার মতোই প্রথমে খড় বেঁধে তাতে এঁটেল মাটির প্রলেপ দিয়ে একটা কাঠামো তৈরি করতে হয়। এরপর সেটিকে প্লাস্টারের ডাইস করা হয়। এবার সেটির আলাদা আলাদা টুকরো করতে হয়। মানে হাত, পা, দেহ, গলা, হাতের তালু ইত্যাদি। একটি প্রতিমার ক্ষেত্রে প্রায় ৭০-৮০টি টুকরো তৈরি করতে হয়। ফাইবার তৈরির পর আবার ঘষা-মাজা করে সেই টুকরোগুলিকে একটা একটা করে জুড়ে তা প্রাইপার পুটিং করতে হয়। তারপর ফিনিশিং করতে হয়।” তবে শুধু ফাইবারের ক্ষেত্রেই নয়, ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরির আগেও প্রাথমিক পদ্ধতি একইরকম হয়ে থাকে। এবার আসা যাক রঙের বিষয়টিতে। এক্ষেত্রেও মাটির প্রতিমার তুলনায় প্রক্রিয়া আলাদা।
প্রশান্ত পালের বর্ণনায়, বাড়ির দেওয়ালে যে রং করা হয়, সেই অয়েল কালারই ব্যবহৃত হয় প্রতিমার কাঠামোয়। তিনি বলেন, “আসলে একবার প্রতিমা নিয়ে গিয়ে তিন-চারবার পুজো করে থাকেন বিদেশের অনেক উদ্য়োক্তা। সে কথা মাথায় রেখেই অয়েং কালার করা হয়। যাতে প্রতিমায় জল কিংবা ফুল পড়লেও রং একইরকম থাকে।” প্রতিমা সাজানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ যত্ন নেন শিল্পী। বলছিলেন, “বছরের প্রথম মাস থেকেই অর্ডার আসতে শুরু করে। আগেভাগে প্রতিমা গড়া হয়ে গেলে জাহাজে করে তা পাড়ি দেয় ইউরোপের (Europe) দেশে। তবে এখন বাকি প্রতিমা আকাশপথে যাবে।” উপার্জনের তাগিদে যাঁরা দেশের বাইরে থাকতে হয়, তাঁদের কাছেও কুমোরটুলি থেকে পৌঁছে যায় মা। উৎসবে মেতে ওঠেন প্রবাসীরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.