সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেষ কবে চিঠি লিখেছেন মনে পড়ে? চিঠিতে প্রিয়জনদের কীভাবে সম্বোধন করতে হয় ভুলে যাননি তো? আসলে কর্মব্যস্ত জীবনে চিঠি লেখার অভ্যেসটা হয়তো পুরোপুরিই হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু উত্তর কলকাতার অরবিন্দ সেতু সর্বজনীনের (Aurobindo Setu Sarbojanin) পুজো মণ্ডপে ঢুকলে আপনার মনে হবে ভারচুয়াল জগত পেরিয়ে আরও একবার পৌঁছে গিয়েছেন চিঠির দুনিয়ায়। এবারের পুজোয় (Durga Puja 2021) তাঁদের থিম ‘ডাকযোগ’। অরবিন্দ সেতু সর্বজনীনের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়েছে স্বয়ং ডাকবিভাগ। অষ্টমীর দিন উত্তর কলকাতার ওই মণ্ডপেই খোলা হবে আস্ত একটি অস্থায়ী পোস্ট অফিস!
আসলে খবরের বোঝা কাঁধে আজ আর ছুটতে হয় না ‘রানার’কে। তাঁর হাতের ঘণ্টার ঝুম ঝুম শব্দ আজ বদলে গিয়েছে সেলফোনের মেসেজ টোনে। আজকের ভারচুয়াল জগতে মুঠোফোনের দাপটে ব্রাত্য ‘চিঠি’। তথৈবচ অবস্থা পোস্ট অফিস, ডাকবাক্সগুলির। কিন্তু ব্রাত্য হলেও চিঠি বা ডাকব্যবস্থা আজও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি। এখনও বহু মানুষের কাছে চিঠি এক আবেগের নাম। অধীর আগ্রহে পোস্টম্যানের আগমনের জন্য অপেক্ষা আর হয়তো নেই। চিঠি হাতে পাওয়ার পর আবেগের বিস্ফোরণও হয়তো আর নেই। কিন্তু সেই নস্ট্যালজিয়া রয়ে গিয়েছে অনেকের মননেই। আর এবারের পুজোয় সেই নস্ট্যালজিয়াই উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে উত্তর কলকাতার অরবিন্দ সেতু সর্বজনীন।
এবার ৪৫ বছরে পদার্পণ করছে অরবিন্দ সেতু সর্বজনীনের পুজো। রাজু সূত্রধরের থিম ভাবনায় পুরো মণ্ডপ সেজে উঠেছে চিঠি, ডাকটিকিট এবং পোস্টকার্ড দিয়ে। মণ্ডপে ঢুকে এক নিমেষের জন্য মনে হতে পারে, আপনি হয়তো কোনও পোস্ট অফিস বা ডাকবিভাগের (Indian Post) কোনও পুরনো কিন্তু সুসজ্জিত অফিসে ঢুকে পড়েছেন। গোটা মণ্ডপজুড়ে ছোট ছোট চিঠি ফেরাবে ছেলেবেলার স্মৃতি। সেই সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রকাশিত ডাকটিকিট। যা একেকটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্মারক। ডাকটিকিটের আদলে তৈরি হচ্ছে মাতৃমূর্তিও। এক লহমায় তাকালে মনে হতে পারে মা যেন স্বয়ং ডাকটিকিটের মধ্যেই বসে আছেন। অরবিন্দ সেতু সর্বজনীনের মাত্র প্রতিমা তৈরি করেছেন শিল্পী গোপাল পাল (Gopal Pal)।
সেই সঙ্গে সিধুর আবহ সংগীত মণ্ডপের পরিবেশে অন্য মাত্রা যোগ করছে। অরবিন্দ সেতু সর্বজনীনের পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মিন্টু পাত্র বলছিলেন,”ডিজিটাল যুগে হারিয়ে গেছে চিঠি লেখার রীতি। চিঠিতে লেখা সেই সম্বোধনের ভাষা আজকের তরুণ প্রজন্মের জানা নেই। ধীরে ধীরে কালের নিয়মে কমেছে মানুষের ডাকটিকিট (Stamp) জমানোর শখও। পাড়ার মোড় থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই সমস্ত ডাকবাক্সের কথাই মনে করাবে এই মণ্ডপ।”
উদ্যোক্তাদের প্রয়াসকে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতীয় ডাকবিভাগও। ঘটনাচক্রে এই সময়ই ডাকবিভাগের পোস্টাল সপ্তাহ উদযাপন চলছে। অরবিন্দ সেতুর পুজোর থিমের কথা জানতে পেরে ভারতীয় ডাক বিভাগের উত্তর কলকাতার সদর দপ্তরের তরফে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ডাকবিভাগ পুজো উদ্যোক্তাদের থিম ভাবনার স্বীকৃতি স্বরূপ পুজোর অষ্টমীর দিন প্যান্ডেলেই আস্ত একটি অস্থায়ী পোস্ট অফিস খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষ এসে চিঠি পোস্ট করতে পারবেন। কিনতে পারবেন ডাকটিকিটও। শুধু তাই নয়, এই পুজোর মণ্ডপের আদলে একটি বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ডাকবিভাগ। ডাকবিভাগের এই উদ্যোগে স্বভাবতই আপ্লুত উদ্যোক্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.