নিরুফা খাতুন: উদ্যোগের অভাবে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়ার দুর্গাপুজো (Durga Puja 2021) বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আট বছর আগে। মধ্য কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সেই বারোয়ারি দুর্গাপুজো ফের হচ্ছে এবছর। উদ্যোগে তৌফিক, আবদুর রহমান, মইনুলরা।
কলকাতা পুরসভার (KMC) ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সংখ্যালঘু প্রধান এলাকা। মূলত অবাঙালি মুসলিমদের বসবাস। মাঝে হাতেগোনা কয়েক ঘর বাঙালি হিন্দু পরিবারের বাস। তাঁদেরই উদ্যোগে একসময় এখানে দুর্গাপুজো করা হত, ছোট করেই। পরে লোক ও অর্থাভাবে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায় ২০১৩ সালে। আট বছর পর, এবছর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের (Alimuddin Street) সেই পুজো ফের চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় যুবক তৌসিফ, শাকিল, ওয়াসিমরা। তাঁরা পুজোর সব দায় তুলে নিয়েছেন নিজেদের ঘাড়ে। খুঁটিপুজো, অর্থের জোগাড়, কুমোরটুলিতে গিয়ে প্রতিমার বায়না, পুরোহিত খোঁজা সবই! হাত লাগিয়েছেন মণ্ডপ তৈরিতেও। যে হাতে ইদের শামিয়ানা টাঙিয়ে থাকেন শাকিল, ওয়াসিমরা, দুর্গাপুজোর মণ্ডপ বাঁধছেন সেই হাত দিয়েই।
পুজোর জন্য কোনও চাঁদা তুলছেন না তৌফিকরা। সমস্ত ব্যয়বহন করছেন নিজেরাই। তাঁদের উৎসাহ দেখে এলাকার অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তৌফিক, মুন্না, শাকিলরা দলবেঁধে কুমোরটুলি গিয়ে একচালার প্রতিমা বায়না করে এসেছেন। ৭৪এ, এ জে সি বোস রোডের ফুটপাথের উপর মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। তার আগে এলাকাবাসীকে পাশে রেখে বিধি মেনে পুরোহিত দিয়ে খুঁটিপুজোও করানো হয়েছে মঙ্গলবার।
এই প্রথম পুজোর আয়োজন। কিন্তু তাতে কী? বোধন থেকে বিসর্জন, সবই নিয়ম মেনে করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তৌফিকরা। পুজোর ধর্মীয় রীতিনীতি যাতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করা হয় সেজন্য প্রথম থেকেই সচেতনও। যে কারণে স্থানীয়দের কাছে পুজোর নিয়মাবিধি জেনে নিচ্ছেন মন দিয়ে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সর্বজনীন পুজোর পুনর্জন্মের প্রধান উদ্যোক্তা মহম্মদ তৌফিক রহমানের কথায়, “উৎসবের কোনও রং হয় না। এখানে আমরা সবাই মিলে ইদে আনন্দ করি। পুজোতেও সেভাবেই আনন্দ করব।” তিনি জানান, “আগে এখানে পুজো হত। কিন্তু কখনও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতাম না। চাঁদা দিয়ে দায় সারতাম। তারপর পুজো বন্ধও হয়ে যায়। এবার এলাকার সংখ্যালঘুরা মিলে সেই পুজো চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
একই উৎসাহের সুর তৌফিকের পুজো-সঙ্গী মইনু্ল, আবদুর রহমানদের গলায়। সমস্বরে বলছেন, “ইদ, সবেবরাত করেছি। এই প্রথম পুজোর আয়োজন করছি। অথচ সেই পুজোর নিয়মনীতি কিছুই জানি না। এটা একটা চ্যালেঞ্জ! জীবনের প্রথম পুজোর প্রতিমা অর্ডার করতে কুমোরটুলিতে গিয়েছিলাম। এটাও আমাদের কাছে আলাদা অভিজ্ঞতা। প্রতিমা বায়না করার পাশাপাশি কুমোরটুলি পাড়াটা ঘুরে দেখে এলাম। এই প্রথম।”
তৌফিক জানাচ্ছেন, “পুজোর চারদিন এখানে ভোগের ব্যবস্থা থাকছে। চারদিন আলাদা আলাদা পদ। তার মধ্যে একদিন পাড়ার সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। ভোগ রান্নার জন্য ব্রাহ্মণ নিয়ে আসা হচ্ছে। ষষ্ঠীর সন্ধিপুজো, কলাবউ স্নান, অঞ্জলি, দশমীর দিন সিদুঁর খেলা, সব আয়োজনই থাকছে।” পুজো ফের শুরু হওয়ায় খুশির ঝিলিক এখানকার বাসিন্দা এ কে রায়, জয়ন্ত দে, শর্মিলাদেবী, রত্নাদেবীদের চোখে। বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে পুজোর উদ্যোক্তা ছিলেন এঁরাই। জয়ন্তবাবু বলেন, “আগে আমরা কয়েকজন মিলে পুজোটা করতাম। কিন্তু বাজেট এবং লোকবলের অভাবে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর প্রতিবেশী সংখ্যালঘুভাইরা এসে পুজো করবে বলে জানায়। ওরা নিজেরাই সব আয়োজন করতে চায়। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম ওরা হয়তো পারবে না। তবে ওদের আগ্রহ দেখে আমরাও এগিয়ে এসেছি। কুমোরটুলিতে গিয়ে প্রতিমা বায়না করে এসেছে। আমাদের কাছে এসে পুজোয় ধর্মীয় আচারবিধি সম্পর্কে জেনে যাচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.