সুলয়া সিংহ: মারণ ভাইরাস (Coronavirus) আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঝাঁজরা হয়েছে বাংলা। অতিমারী পরিস্থিতিতে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতোই কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে আমফানের তাণ্ডব। তাই বলে কি মেঘের ফাঁকে শরৎ উঁকি দেবে না? কাশফুলে ভরবে না মাঠ-ঘাট? মা আসবে না? নিশ্চয়ই আসবে। আসবে আমফান বিধ্বস্ত প্রত্যন্ত হিঙ্গলগঞ্জের ছোট সাহেবখালির দুটি পাড়াতেও। সৌজন্যে কলকাতার বিখ্যাত পুজো কমিটি দমদম তরুণ দল। নিয়তির কাছে হার মেনে নেওয়া গ্রামবাসীদের ঘুরে দাঁড়ানো সাহস যোগান ক্লাবের সদস্যরা। সংকটের দিনে পাশে দাঁড়িয়ে গ্রামের দুটি দুর্গাপুজো (Durga Puja) আয়োজনের দায়িত্ব নেন। বুকভরা স্বস্তি আর ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে স্থানীয়দের।
গত মে মাসে লকডাউনের মধ্যেই বিধ্বস্ত বাংলার সাক্ষী থেকেছিল গোটা দেশ। ঘূর্ণিঝড় আমফানে (Amphan) তছনছ হয়ে গিয়েছিল বহু মানুষের বাড়িঘর। সাজানো সুন্দরবনের চেহারাটা তখন রীতিমতো ভয়ংকর। ৩০ মে আমফানের ত্রাণ দিতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন দমদম তরুণ দল ক্লাবের সদস্যরা। দেখেন, হিঙ্গলগঞ্জের ছোট সাহেবখালির ৩২৫টি বাড়ির মধ্যে ২১০টিই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে পুজোর কথা ভাবতেও পারছিলেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। যাঁদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জুটছে না, তাঁরা আর কীভাবে পুজোর স্বপ্ন দেখবেন! প্রতিবার ছোট করে আয়োজন করা পুজোয় যে এবার ছেদ পড়বে, তেমনটাই ভেবে নিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। আর ঠিক এই ছবিটা দেখেই মনের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে তরুণ দলের বিশ্বজিৎ প্রসাদ ও অন্যান্যদের। প্রতিবারের মতো না হলেও তাঁরাও পুজো করবেন, অথচ এই মানুষগুলি উৎসব থেকে বঞ্চিত হবেন, তেমনটা কীভাবে হয়? তাই ঠিক করেন, একসঙ্গে তিনটে পুজোই হবে।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। স্থানীয়দের জানিয়ে দেন ছোট সাহেবখালির দুই পাড়ার দুটি পুজোর প্রতিমা আর লাইট দিয়ে মণ্ডপসজ্জার খরচ দেবেন তাঁরা। একইসঙ্গে মহানবমীতে ভোগের দায়িত্বও নেবেন। প্রতিবার নিজেদের ক্লাবে প্রায় ২ হাজার মানুষকে ভোগ খাওয়ায় তরুণ দল। এবার মায়ের ভোগের আয়োজন হতে ওই গ্রামটির পুজোয়। পোলাও, বেগুনি, আলুরদম আর পায়েস।
পুজোর আয়োজন তো হল, উৎসবে যে নতুন জামাকাপড় কেনারও সাধ্য নেই স্থানীয়দের! আমফানের জেরে চাষাবাদ বন্ধ। মাছ চাষ করলেও নোনা জল ঢুকে সব মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই মুশকিলও আসান করলেন বিশ্বজিৎরা। এলাকার প্রায় এগারোশো বাসিন্দার জন্য শাড়ি, চুড়িদার, পাঞ্জাবি ও বাবা-স্যুটের অর্ডার দিয়ে দেন তাঁরা। চলতি সপ্তাহেই তা পৌঁছে দেওয়া হবে সেই গ্রামে। ইতিমধ্যে প্রতিমা ও আলোর খরচও দেওয়া হয়েছে। আর নবমীর দিন নিজেরাই উপস্থিত থেকে ভোগ খাওয়াবেন।
বিশ্বজিৎ প্রসাদ বলছিলেন, “আমরা পুজো করব, আর উৎসবের দিয়ে ওই অসহায় গ্রামটা অন্ধকারে ডুববে, সেটা হতে দিতে ইচ্ছা করেনি। তাই এই ছোট্ট প্রয়াস। আমাদের মতো আরও ক্লাব নিজেদের মতো করে এগিয়ে আসুন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক। এটুকুই চাইব।” দুই গ্রামের পুজো-সহ সমস্ত আয়োজনের জন্য খরচ হচ্ছে ১৫ লক্ষ টাকা। নিজেদের পুজোর আয়োজন কাটছাঁট করেই ছোট সাহেবখালির পাশে দমদম। আর তাঁদের পুজো? তিলোত্তমাতে গ্রাম্য ফ্লেভার এনে তিনটি পুজোকে মিলিয়ে দেওয়ার কাজটি করছেন শিল্পী দেবতোষ কর। বরাবরই পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে মণ্ডপ গড়ায় বিশ্বাসী শিল্পী এবার বাঁশ আর খড় দিয়েই সৃষ্টি করছেন ‘উমা বাটী’। “তরুণ দলের মহৎ উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরেই ভাল লাগছে”, বলছিলেন শিল্পী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.