সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: মাওবাদীদের ‘টার্গেট’ ছিলেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পাঁচু রায়। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে একটি দৈনিক কাগজে দিনের পর দিন লিখেছিলেন তিনি। সেই কারণেই কি বিস্ফোরণ? তদন্ত শুরু করার পর উত্তর খুঁজছে সিআইডি।
মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্তের পর সিআইডির এক কর্তা জানান, যে ধরনের বড় সকেট বোমা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি অনেকটাই ‘মাইন’-এর মতো দেখতে। ঝাড়খণ্ডে পাইপ, বড় কৌটো বা টিফিনবক্সের মধ্যে বিস্ফোরক রেখে এই ধরনের বোমা বা ‘মাইন’ তৈরি করে মাওবাদীরা। দমদমে বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল বোমাটি। তার ভিতর এক কিলোগ্রাম বা তার চেয়েও বেশি পরিমাণ রাসায়নিক ছিল, এমন সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। এই বোমা যে এলাকার কোনও অপরাধী বা দুষ্কৃতীর তৈরি নয়, সেই বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত সিআইডি। এই ক্ষেত্রে পাইপের মতো একটি বস্তুর ভিতরে বিস্ফোরক পুরে তৈরি করা হয়েছিল সকেট বোমা। ঝাড়খণ্ড থেকে এই বোমা নিয়ে আসা হয়েছিল, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। সপ্তাহে দু’দিন সাড়ে আটটা থেকে ন’টার মধ্যে পাঁচু রায় ঘটনাস্থলে গায়েই একটি অফিসে বসেন।
মঙ্গলবার সকাল ন’টার পরই বিস্ফোরণটি ঘটে। যদিও তিনি এই অফিসে ছিলেন না। এখানে ‘টাইমার’ হিসাবে ছিল গ্লিসারিন ও চিনির সংমিশ্রণ। যে ব্যক্তি বোমাটি রেখে যায় অথবা ‘ট্রিগারিং’ করে, সে সম্ভবত জানত না আসল ‘টার্গেট’ কে বা বিস্ফোরণের আসল কারণ। তাই পাঁচু রায় ঘটনাস্থলে না থাকা সত্ত্বেও সে বিস্ফোরণের প্রস্তুতি নেয়। ‘ট্রিগারিং’ করে পালানোর পর বিস্ফোরণটি হয়। এমনকী, এই ঘটনা ঘটানোর আগে সে ওই জায়গাটিতে একাধিকবার ‘রেইকি’ করেছে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। সম্ভবত কোন সময় পাঁচুবাবু আসেন, কতক্ষণ থাকেন, তার উপর গত কয়েকটি রবিবার ও মঙ্গলবার সে নজরদারি করে। এদিন দেরি করে আসার ফলেই পাঁচুবাবুর প্রাণরক্ষা হয় বলে ধারণা সিআইডির।
সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, শিরদাঁড়া ভেঙে গেলেও গত কয়েক বছর ধরে এই রাজ্যের জঙ্গলমহলে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। কিন্তু পুলিশের কড়া নজর ও যোগ্য নেতার অভাবে তা তারা পারেনি। সেই কারণে মাওবাদী নেতারা নতুনভাবে এমন কিছু শিক্ষিত যুবক যুবতীকে চাইছেন, যাঁরা নেতৃত্ব দিতে পারেন। কলকাতা ও তার আশপাশের বাসিন্দারাই বেশি পছন্দ মাওবাদী নেতাদের। কয়েক বছর আগে মাওবাদীদের কলকাতার সিটি কমিটি জঙ্গলমহলে বহু কার্যকলাপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত। মাওবাদী নেতা অভিষেক গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিটি কমিটি অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে। সিআইডির কাছে খবর, কলকাতার বেশ কয়েকটি সংগঠন ফের সিটি কমিটিকে নতুন করে শক্ত করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে কলকাতার কয়েকজন যুবক জঙ্গলমহলে গিয়ে ‘ফিল্ড ট্রেনিং’ নিয়ে এসেছে, এমন খবরও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাদের সম্ভবত বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ এই বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.