অভিরূপ দাস: ১৯৮৬-তে পাঁচ হাজার। ২০২২-এ সাকুল্যে দেড়শো কপি। কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় অভিধান বিক্রির খতিয়ান। ডিকশনারির ব্যবসা এভাবে তলানিতে নেমে গিয়েছে দেখে চোখ কপালে উঠলেও অনেকেই বলছেন, এ তো স্বাভাবিক। এখন হাতে হাতে স্মার্টফোন। গুগল থাকতে ডিকশনারির দরকার কী?
বঙ্গে অভিধান বিক্রিতে শিশু সাহিত্য সংসদের নাম সর্বাগ্রে। আগে পড়ুয়ার দেরাজে অত্যাবশ্যকীয় ছিল সংসদের বাংলা অভিধান। এহেন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার দেবজ্যোতি দত্তর কথায়, ডিকশনারি হারিয়ে যাবে, এমনটা আশ্চর্য নয়। বিক্রি যেভাবে পড়ছে, অচিরেই তা শূন্যে ঠেকতে পারে।
প্রকাশকের কথায়, নতুন প্রজন্ম পরিষ্কার শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে না। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি মিশিয়ে একটা খিচুড়ি ভাষা ব্যবহার করে। এক শব্দের একাধিক প্রতিশব্দই শুধু নয়, ডিকশনারি থেকে জানা যায় সঠিক বানানও। নতুন বানান শিখতে, জানতে দেব সাহিত্য কুটিরের অভিধানের কাটতি ছিল মারাত্মক। কর্ণধার রাজর্ষি মজুমদার যদিও নতুন প্রজন্মের জন্য খানিকটা হতাশই। তাঁর কথায়, ডিকশনারির বিক্রি এখন অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। হাতে হাতে মুঠোফোন। ইন্টারনেট দেখেই কাজ চালাচ্ছে ছোটরা। শিক্ষাবিদরা বলছেন, একাধিক ক্ষেত্রে গুগলের বাংলা তর্জমা শিউরে ওঠার মতো। মাথামুন্ডু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
তবু কেন ডিকশনারি কিনছে না নতুন প্রজন্ম? শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার জানিয়েছেন, এসব কিছুর নেপথ্যে পরিশ্রম বিমুখতা। শিক্ষাবিদের বক্তব্য, “ডিজিটাল প্রক্রিয়ার সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে আজ এমন অবস্থা। বই সেখানে গৌণ।” এই মুহূর্তে গুটিকয়েক মানুষ যাঁরা ডিকশনারি কিনছেন তাঁদের বয়স চল্লিশের উপরে। শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারের কথায়, “ছোটরা নয়। এই সমীক্ষাতেই পরিষ্কার, আমাদের প্রজন্মই এখনও বই পড়ছে। ছোটরা মোবাইল দেখে চটজলদি শব্দের মানে খুঁজছে।” গুগল যে সবসময় সঠিক, শ্রুতিমধুর শব্দ দিচ্ছে তাও নয়। দেবজ্যোতিবাবুর কথায়, ”অনেক বড় বিজ্ঞাপন সংস্থার বিজ্ঞাপনে বাংলা বাক্যের যে ব্যবহার দেখি তা শিউরে ওঠার মতো।”
এহেন প্রবণতা বাড়ায় প্রমাদ গুনছেন শিক্ষকরা। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ছোটদের মুখে এমন অনেক শব্দের ব্যবহার শুনি যা আদৌ বাংলা নয়। ছোটরা জানেও না তারা সঠিক বাংলা বলছে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.