অর্ণব আইচ: অনিল, একটু গ্যাস সিলিন্ডারটা আনতে যেতে হবে যে। একটু নিয়ে চল। আবেদন প্রৌঢ়র। সাহিল, আমাকে বাজারে নিয়ে চল। অনুরোধ বৃদ্ধের। ভবানীপুরের অনিল বা বউবাজারের সাহিল, প্রত্যেকেই তৈরি তাঁদের ‘দূষণহীন যান’টি নিয়ে। ‘যান’ বলতে হাতে টানা রিকশা। লকডাউনের সময় যেখানে সব যানবাহন বন্ধ, সেখানে এখন রিকশাই হয়ে উঠেছে প্রবীণদের লাইফ লাইন।
পাড়ার ব্যাংক বা দোকানে যেতে শহরের বহু প্রৌঢ় ও প্রবীণের বাহন হয়ে উঠেছে রিকশা। পুলিশের ভাষায়, হ্যাকনে ক্যারেজ। বেআইনিভাবে এই রিকশা চালানো যায় না শহরে। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, লকডাউনের সময়ও কিছু হাতে টানা রিকশা যে শহরে চলছে, তা পুলিশের নজরে এসেছে। আবার সংখ্যায় কম হলেও কলকাতা পুলিশের এলাকায় শহরতলি অঞ্চলে চলছে সাইকেল রিকশা। লকডাউনে অনেককে বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হচ্ছে। বিশেষ করে প্রবীণদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আনতে যেতে হচ্ছে বাজারে। কাউকে যেতে হয়েছে ব্যাংকে। কিন্তু প্রচন্ড রোদ ও গরমে অনেকের পক্ষেই হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। সেই ক্ষেত্রে ভরসা বলতে একমাত্র রিকশাই। তা হাতে টানা হোক বা সাইকেল রিকশাই হোক।
সংখ্যায় কম চলছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশের তরফেও খুব একটা বাধা দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে সওয়ারিদের হাতে প্রমাণ থাকলে রিকশাচালকদের এক কথায় ছাড় দেওয়াই হচ্ছে। তবে কেউ যদি অকারণে রিকশা নিয়ে বের হন অথবা সওয়ারির হাতে কোনও প্রমাণ না থাকে, তবে সেই সওয়ারি ও চালক দু’জনের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লেক মার্কেট এলাকায় রাজু মাহাতো রিকশা চালাছেন প্রায় ৩০ বছর ধরে। জানালেন, লকডাউনের পর প্রথমে বসেই ছিলেন। কিন্তু পাড়ার এক বৃদ্ধা বলেন তাঁকে বাজারে নিয়ে যেতে। ভাল করে হাঁটতে পারেন না তিনি। রাজুর খারাপ লাগে। তিনি বৃদ্ধাকে রিকশা করে বাজারে নিয়ে যান। এরপর দেখেন, আরও কয়েকজন রিকশাচালক যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও রিকশা চালাতে শুরু করলেন।
রিকশাচালক অনিল দাস জানান, হয়তো গ্যাস পাওয়া গেলেও বাড়িতে সরবরাহ হচ্ছে না। তাই গ্যাস সিলিন্ডার পালটানোর জন্য এখন রিকশাই মূল ভরসা। এ ছাড়াও বাজারে যাতায়াত আছেই। বহু বছর ধরে গড়িয়া অঞ্চলে সাইকেল রিকশা চালান বিশ্বনাথ মন্ডল। তিনি জানান, ওই এলাকায় দূর থেকে ওষুধের দোকান বা বাজারে যাতায়াতের জন্য এখন অনেকেরই পছন্দ সাইকেল রিকশা। তবে সব চালক এখন রিকশা নিয়ে বের হচ্ছেন না। যাঁরা বের হচ্ছেন, তাঁদের মুখে থাকছে মাস্ক। অনেকেই আবার হাত ধুয়ে নিচ্ছেন স্যানিটাইজার দিয়ে। আবার দক্ষিণের টালিগঞ্জ থেকে শুরু করে উত্তরের বউবাজার, বড়বাজার, মানিকতলা, শ্যামবাজারের অনেক বাসিন্দাই যাতায়াতের জন্য নির্ভর করে আছেন হাতে টানা রিকশার উপর। তবে দিনের বেলায় ঘন্টা কয়েকের জন্য রিকশা চালাচ্ছেন চালকরা। বাকি সময়টায় তাঁদেরও লকডাউন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.