কলহার মুখোপাধ্যায়: বৃষ্টি পড়লেই রাস্তায় বেরিয়ে নেশা? ঝরঝর বরিষণে অ্যালকোহলের মৌতাত না হলেই নয়? তাতে গুনোগার গুনতে হলেও পরোয়া নেই। পুলিশি খতিয়ানে অন্তত তেমনই ইঙ্গিত। জুন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগে ধরা পড়ার সংখ্যা সব থেকে বেশি। দু’মাসে ৩৫৩ টি করে কেস হয়েছে। জুন মাসে কেসের সংখ্যা ৩২৭।
মদ্যপান করে গাড়ি ড্রাইভ করলে কড়া হাতে মোকাবিলা করবে পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেট এই মনোভাব নিয়ে চলার পর দেখা যাচ্ছে এক লাফে মামলার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। কমিশনারেটের পেশ করা খতিয়ানে দেখা গিয়েছে, ২০১৭ সালে ১৬৭০ জনের বিরুদ্ধে ড্রাংকেন ড্রাইভিংয়ের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল। ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সংখ্যাটা লাফিয়ে ২৮৩১ ছুঁয়েছে। সব থেকে বেশি কেস হয়েছে পুজোর মাসে অর্থাৎ অক্টোবরে। ৪৪০ জনের বিরুদ্ধে মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের কথা আগেই জানিয়েছিল বিধাননগর কমিশনারেট। তার জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছিল পুলিশ। পানশালা থেকে মদ্যপান করে বেরিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে পুলিশি নিদান ছিল, গাড়ি রেখে ক্যাব ডেকে বাড়ি যান। কিংবা চালক ডেকে তার হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং তুলে দিন। এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কমিশনারেটের পক্ষ থেকে একাধিক শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়া মদ খেয়ে দ্বিচক্র যান চালালে সাময়িকভাবে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক মামলা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ। সেটি হচ্ছে, মদ্যপান করে গাড়ি চালাতে গিয়ে ধরা পড়লে চালককে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিক আইন নিয়ন্ত্রণ করার কাজে নিযুক্ত থাকতে বাধ্য করা হত। তারপরেও অবশ্য ড্রাংকেন ড্রাইভিংয়ে যে পুরোপুরি রাশ টানা সম্ভব হয়েছে তা নয়। তবে এই প্রবণতা কমেছে বলে দাবি জানিয়েছে পুলিশ।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গত দু’বছরে ড্রাংকেন ড্রাইভিংয়ে দায়ের হওয়া মামলার খতিয়ান। পুজোর মাস ছাড়া দেখা গিয়েছে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগে ধরা পড়ার সংখ্যা বেশি। দু’মাসে ৩৫৩ টি করে কেস হয়েছে। এর পরেই রয়েছে জুন মাস। কেসের সংখ্যা ৩২৭। দোলের মাসে ২৪১। বরং জানুয়ারি মাসে ২১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ২০১৭-র সঙ্গে তুল্যমূল্য হিসাব কষলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে প্রতি মাসে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৭ সালে অক্টোবর মাসে ৫৬ কেস হয়েছিল। ২০১৮ সালে হয়েছে ৪৪০ টি কেস। ২০১৭তে সবথেকে বেশি মামলা হয়েছিল জুন মাসে। ২৯৪ টি। ২০১৮-র জুনে ৩২৭ টি কেস দেওয়া হয়েছে। ২০১৭তে সবথেকে কম মামলা হয়েছিল জানুয়ারিতে। ১২ টি দায়ের হয়েছিল। ২০১৮তে হয়েছে ২১২টি মামলা। একমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম বছর হয় ১০৫ টি মামলা। দ্বিতীয় বছরে দায়ের হয়েছে ১০১ টি মামলা। এই এক মাস ২০১৭-র তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে ২০১৮।
কমিশনারেট জানিয়েছে, দায়ের হওয়া মামলায় কর্পোরেট সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের যেমন ছাড়া মেলেনি। তেমনই বাস-অটো চালকদেরও ছেড়ে কথা বলেনি পুলিশ। সল্টলেক পাঁচ নম্বর সেক্টর ও নিউটাউনে বহুজাতিক সংস্থার অনেকগুলি অফিস থাকার কারণে একাধিক পানশালা গজিয়ে উঠেছে। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে সেসব বারে মদ্যপান করছে মানুষ। আর তারপর গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার প্রবণতা রয়েছে। টানা ধরপাকড়ের ফলে অবশ্য সে প্রবণতায় বেশ খানিকটা রাশ টানা গিয়েছে বলে কমিশনারেটের দাবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.