প্রতীকী ছবি।
অর্ণব আইচ: ইথিওপিয়া থেকে কলকাতায় চা পাতা আমদানি? প্যাকেট দেখেই সন্দেহ হয়েছিল গোয়েন্দাদের। তাই স্ক্যানারের তলায় সেই প্যাকেট রাখতে চা পাতার যে ছবি স্ক্রিনে ফুটে ওঠে, তাতে সন্দেহ আরও বাড়ে। নমুনা সংগ্রহ করতে একটি প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে পড়ে ‘খট’, যা আসলে মাদক। দেখতে চা পাতার মতো হলেও আফ্রিকায় প্রচলিত এই মাদক। ভারতের মতো বেশ কিছু দেশে তা নিষিদ্ধ। আফ্রিকা থেকে কলকাতায় রীতিমতো ডাকযোগে পাচার করা হচ্ছিল ‘খট’। কিন্তু তার আগেই কলকাতায় ‘ফরেন পোস্টাল অফিস’ থেকে শুল্ক দপ্তরের গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ল প্রায় ৮০ কিলোগ্রাম ‘খট’। সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক বাজারে এই ‘খট’ মাদকের দাম কয়েক লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্কশাল আদালতে উদ্ধার হওয়া ওই মাদক পেশ করেন শুল্ক দপ্তরের গোয়েন্দারা।
[রক্ত পরীক্ষার ভুল রিপোর্টে এইডসের আতঙ্ক ছড়াল হাওড়ায়]
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচটি পেল্লাই মাপের কার্টুনে করে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়া থেকে কলকাতায় ডাকযোগে এসেছিল এই মাদক। বলা হয়েছিল, আফ্রিকা থেকে চায়ের পাতা এসেছে কলকাতায়। যাঁর নামে এই জিনিসগুলি এসেছে, তিনি হচ্ছেন সঞ্জয় দাস। হাওড়ার ডোমজুড়ের একটি ঠিকানায় তা যাওয়ার কথা। বাক্সগুলি আসার পর তা খতিয়ে দেখে প্রথমেই খটকা লাগে বিদেশ ডাক অফিসের শুল্ক আধিকারিকদের। আফ্রিকা থেকে কলকাতায় চায়ের পাতা আমদানি করার কারণ খুঁজতে শুরু করেন তাঁরা। কারণ, ইথিওপিয়ায় অত্যন্ত ছোট এলাকাজুড়ে চা চাষ হয়। তা এত উচ্চমানের নয় যে, পেটি করে তা আমদানি করবেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা। তাই সেই পেটি এক্স-রে স্ক্যানারে পরীক্ষা করতেই ধরা পড়ে যায় জারিজুরি। বেরিয়ে আসে ‘খট’ মাদকের পাতা।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মধ্য প্রাচ্য, পূর্ব ও উত্তরপূর্ব আফ্রিকার দেশগুলিতে ‘খট’ চাষ হয়। ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, কেনিয়া-সহ বেশ কিছু দেশে ‘খট’ বেআইনি নয়। আফ্রিকার বাসিন্দারা ‘খট’-এর পাতা চিবোতে পছন্দ করেন। এই পাতা চিবিয়ে মুখে রাখলে নেশা হয়, যা আফ্রিকার বাসিন্দাদের বিশেষ পছন্দ। আবার অনেকেই ‘খট’ পাতা ফুটিয়ে চায়ের মতোই তা খেতে ভালবাসেন। একটি অংশ আবার ‘খট’ পুড়িয়ে তার ধোঁয়াও সেবন করেন। বহুদিন ধরে আফ্রিকায় ‘খট’-এর প্রচলন থাকায় অনেকটা ভারতে তামাকের মতোই সে দেশে তা নিষিদ্ধ নয়। দেশগুলি থেকে ‘খট’ অন্য কয়েকটি দেশে রফতানিও করা হয়। কিন্তু বিশ্বের বহু দেশেই ‘খট’ নিষিদ্ধ। এই দেশে তা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আফ্রিকা থেকে তা পাচার করে কলকাতায় নিয়ে আসার ছক কষেছিলেন এক ব্যবসায়ী।
এই ‘খট’ মাদক কলকাতা বা তার আশপাশে বিক্রির জন্য পাচার করা হচ্ছিল না কি কলকাতা থেকে তা ফের বাংলাদেশ বা নেপালের মতো বিদেশে পাচার করা হত, গোয়েন্দারা তা খতিয়ে দেখছেন। গোয়েন্দাদের মতে, যে ব্যবসায়ী এই মাদক পাচার করার কাজে নেমেছিলেন, তিনি জানেন এই দেশে ‘খট’ নিষিদ্ধ। তাই চায়ের পাতার আড়ালেই তা পাচার করার চেষ্টা করছিল। সম্প্রতি মাদক পাচারের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ডার্ক ওয়েবে অর্ডার দিলেই বাড়িতে পৌঁছে যায় মাদক। তবে ইথিওপিয়ার কোন ‘খট’ বিক্রেতা সংস্থা এই জিনিসগুলি ডাকযোগে পাচার করছিল, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। যে ব্যবসায়ী এই মাদক পাচার করছিলেন, তাঁকে জেরা করার পর এই বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
[ফাঁস SBI-এর কয়েক লক্ষ গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের তথ্য! প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.