অর্ণব আইচ: সোনা পাচারই ‘পারিবারিক পেশা’। প্রথমে বাংলাদেশ থেকে সিন্ডিকেটের হাত দিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ। এরপর বনগাঁ থেকে উত্তর শহরতলি হয়ে বড়বাজার। এই রুটেই বিপুল পরিমাণ সোনা পাচারের ছক কষেছিল বনগাঁর এক সোনা পাচারকারী। কিন্তু মধ্য কলকাতার বড়বাজারের সোনাপট্টিতে সোনা পৌঁছনোর আগেই তা ধরে ফেলল কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টালিজেন্স। ডিআরআই-এর হাতে ধরা পড়ল ১ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকার সোনার বিস্কুট। প্রায় দু’কিলো সোনা ধরা পড়েছে। এই ব্যাপারে দু’দফায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেন ডিআরআই আধিকারিকরা। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে এক দম্পতিও। ওই মহিলাকে কাজে লাগিয়েও সোনা পাচার করা হত, এমনই অভিযোগ ডিআরআইয়ের।
ডিআরআই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দফায় বৃহস্পতিবার ডানলপ থেকে ধরা পড়ে অতনু ঘোষ, অভিজিৎ বিশ্বাস ও দোলন বিশ্বাস। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৭৭ লাখ টাকার সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়। এর পর তদন্ত করে শুক্রবার সকালেই লেকটাউন থেকে ধরা পড়ে মহাদেব হালদার ও গণেশ রক্ষিত নামে আরও দুই পাচারকারী। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার সোনার বিস্কুট উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। ডিআরআই-এর এক আধিকারিক জানান, এই পুরো চক্রের মাথা হচ্ছে সুকুমার হালদার নামে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তিই মূলত বাংলাদেশ থেকে সোনার বিস্কুট ও সোনার বাঁট পাচার করে। সে ভারত ও বাংলাদেশের সোনা পাচারকারী সিন্ডিকেটের এক অন্যতম সদস্য। তার বাংলাদেশে যাতায়াত রয়েছে বলে অভিযোগ ডিআরআইয়ের। পাচার হওয়া সোনা বড়বাজারের সোনাপট্টিতে গলিয়ে ফেলার পর তা দিয়েই গয়না তৈরি করা হয়। পরে সুকুমারের সিন্ডিকেটই সেই সোনার গয়না ফের চোরাপথে সীমান্ত পার করে পাচার করে বাংলাদেশে।
ডিআরআইয়ের আধিকারিকরা সম্প্রতি খবর পান যে, সুকুমারের সিন্ডিকেট প্রচুর পরিমাণ সোনা বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে পাচার করেছে বনগাঁয়। ডিআরআই কর্তাদের অভিযোগ, সুকুমার নিজের পরিবার ও আত্মীয়দের কাজে লাগিয়েই কলকাতায় সোনা পাচারের ব্যবস্থা করে। সেইমতো সুকুমার তার দুই ভায়রাভাই অতনু ও অভিজিৎ এবং শ্যালিকা দোলনের হাতে সোনা তুলে দেয়। মহিলার ব্যাগে সোনা থাকার ফলে কেউ সন্দেহও করেন না। আবার একই সঙ্গে সুকুমার সোনা দেয় দুই আত্মীয় মহাদেব ও গণেশকে। বৃহস্পতিবার সকালে পাঁচজন বনগাঁ লোকালে উঠে শিয়ালদহের দিকে রওনা দেয়। যদিও সুকুমারের পরিকল্পনামতো দুর্গানগর স্টেশনে নেমে পড়ে পাঁচজনই। মহাদেব ও গণেশ যে প্রতিনিয়ত কলকাতায় যাতায়াত করে, তা তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মান্থলি টিকিট দেখেই বোঝা গিয়েছে।
এরপর বাসে করে দম্পতি অভিজিৎ-দোলন ও অতনু ডানলপে আসে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিআরআই-এর গোয়েন্দারা ডানলপেই ফাঁদ পাতে। সাতটি সোনার বিস্কুট নিয়ে ধরা পড়ে মহিলা-সহ তিনজন। তাদের টানা জেরা করেই অন্য দু’জন সোনা-সহ ধরা পড়ে। শুক্রবার পাঁচজনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তদের আইনজীবীর দাবি, এক কোটি টাকার উপর সোনা উদ্ধার জামিন অযোগ্য হলেও ধৃতদের কাছ থেকে আলাদাভাবে দু’দফায় সোনা উদ্ধার হয়েছে। একেকটি দফায় উদ্ধার সোনার পরিমাণ এক কোটির অনেক কম। তাই তাদের জামিনের আবেদন জানানো হয়। যদিও ডিআরআইয়ের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে ধৃতদের শর্তসাপেক্ষ জামিনের নির্দেশ দেন বিচারক। যদিও ধৃতদের জেরা করা হবে। সোনা পাচারকারী চক্রের মাথা সুকুমার হালদারের সন্ধানে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে ডিআরআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.