ছবি: ফাইল চিত্র।
অর্ণব আইচ: বাইরের লোক দেখে কি তারা ভয় পাচ্ছে, না কি উলটে ভয় দেখাচ্ছে? কতটা দৌড়নোর পর হাঁফিয়ে পড়ছে? কতটা ওজনই বা টানতে পারছে? মাংসের গন্ধ শোঁকার ক্ষমতা কতটুকু? কথা বলতে পারে না তারা। কিন্তু স্কুলে যাওয়ার আগে যে তাদের ‘অ্যাডমিশন টেস্ট’ নিতেই হবে। তাই ডগ স্কোয়াডের নতুন পাঁচ সদস্যকে পরীক্ষা করে বেছে নিতে জবুথবু ঠান্ডায় চণ্ডীগড়ে (Chandigarh) পৌঁছেছে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) বিশেষ একটি টিম। ইতিমধ্যেই পাঁচটির মধ্যে দু’টি জার্মান শেফার্ড ও একটি গোল্ডেন রিট্রিভার পাস করেছে পুলিশ হওয়ার পরীক্ষায়। এবার আরও দু’টি ল্যাব্রাডর অথবা গোল্ডেন রিট্রিভার বাছাইয়ের পথে পুলিশের টিম। এর পরই তাদের নিয়ে হরিয়ানার ভানুতে ইন্দো টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশের (ITBP) প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছবেন পুলিশ আধিকারিকরা। আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু তাদের পুলিশ কুকুর হওয়ার ক্লাস।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডে (Dog Squad) আরও পাঁচ সদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে দু’টি জার্মান শেফার্ড, যাদের পাহারাদার বা গার্ড ডগ হিসাবে নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়াও বাকি তিনটি লাব্রাডর অথবা গোল্ডেন রিট্রিভার, যাদের নিয়োগ করা হবে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হিসাবে। লালবাজারের ডাকা টেন্ডারে চণ্ডীগড়ের এক কুকুর ব্যবসায়ী দর দেন। সেই সূত্রেই ডগ স্কোয়াডের তিন পুলিশ আধিকারিক ও এক পশুচিকিৎসক সম্প্রতি চণ্ডীগড়ে পৌঁছন। মূলত তিন দফায় নেওয়া হয় পরীক্ষা। প্রাথমিকভাবে ৬ থেকে ৯ মাসের কুকুরশাবকের মাথা, দৈর্ঘ্য, দাঁত, ওজন, পায়ের মাপ, পেট, চলার ভঙ্গিমা পরীক্ষা করা হয়। বেশ কিছু কুকুর শাবককে একসঙ্গে মিশতে দিতে দেখা হয়, তারা কীভাবে খেলছে বা ঝগড়া করছে। দ্বিতীয় দফায় একেকটিকে আলাদাভাবে নিয়ে এসে তাকে দৌড় করিয়ে হাঁফিয়ে পড়ছে কি না, তা দেখা হয়। একটি বিশেষ যন্ত্রে তারা কামড়ায়। তাতেই বোঝা যায়, তাদের দাঁতের জোর কতটা। পিছনের পায়ের সঙ্গে ওজন বেঁধে দেওয়া হয়। সেই ওজন তারা খেলাচ্ছলে কতটা টানতে পারছে, তা দেখা হয়।
সবচেয়ে যে জিনিসটির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেটি হচ্ছে নতুন পরিবেশে সে কতটা মানিয়ে নিতে পারছে, তা দেখা। এই ‘অ্যাডমিশন টেস্ট’-এর সময় কোনও শাবকের পরিচিত ব্যক্তি হাজির থাকে না। অপরিচিত লোকের সামনে সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে, না কি ভয় পেয়ে দূরে পালিয়ে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হয়। হঠাৎ কোনও শব্দ শুনে শাবকটি ভয় পাচ্ছে, না কি প্রতিবাদ জানিয়ে ডেকে উঠছে, তা দেখা হয়। বল বা কোনও বস্তু ছুড়ে দিলে শাবকটি সেদিকে দৌড়ে যাচ্ছে কি না, তা দেখে বিচার করা হয়, সেটির কাজের ইচ্ছা কতটুকু।
তৃতীয় দফায় নেওয়া হয় ‘বিভাগীয় পরীক্ষা’। যেমন, ‘গার্ড ডগ’-এর ক্ষেত্রে জার্মান শেফার্ডের শাবককে লোভনীয় মাংস জাতীয় খাবার খেতে দেওয়া হয়। কিছুটা খাওয়ার পর তার কাছ থেকে খাবারটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন আধিকারিকরা। দেখা হয়, সে খাবারটি ছেড়ে দিচ্ছে, না কি সহজাত প্রবৃত্তি থেকে তাড়া করছে। তার রাগ ও তেজ কতটা সেটা দেখা হয়। আবার বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞর ক্ষেত্রে কিছুটা মাংস খেতে দেওয়ার পর তা লুকিয়ে ফেলা হয়। কেউ রণে ভঙ্গে দিলেই সে ফেল করবে। আর সেই মাংস গন্ধ শুঁকে বের করতে পারলেই সে পাস। রবিবারের মধ্যেই আইটিবিপির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাস করা পাঁচ শাবককে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আরও এক প্রস্থ তাদের পরীক্ষা করবেন সেখানকার পশুচিকিৎসকরা। কলকাতা থেকে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন পাঁচ হ্যান্ডলারও। এর পরই তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.