সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রোগীদের জন্য বাংলায় প্রেসক্রিপশন লেখার প্রয়োজনীয়তা কী? এনিয়েই এক সেমিনারে সমাজের নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা সহমত হলেন। তাঁরা একবাক্যে বললেন, ওষুধের নাম না হোক, দিনে কখন-কতবার ওষুধ খেতে হবে, প্রেসক্রিপশনে অন্তত তা লেখা থাকুক মাতৃভাষায়। আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসে ‘রোগীর মুখের ভাষাতেই লেখা হোক প্রেসক্রিপশন’ শীর্ষক বিতর্ক সভায় এই বিষয়ে এক মত সকলে। রোগীর মনের কাছাকাছি পৌঁছতে হলে মাতৃভাষায় প্রেসক্রিপশন লেখাই একমাত্র পথ বলে অভিমত জানালেন ড. সুকুমার মুখোপাধ্যায়, নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার, ড. মধুমিতা মুখোপাধ্যায়, ড.কল্যাণ সরকার, ড.কিরণ মুখোপাধ্যায়, ড. অশোকানন্দ কোনাররা।
এই বিষয়ে প্রয়াত ডা. ভূমেন্দ্র গুহকে পথপ্রদর্শক আখ্যা দিয়ে অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, তাঁর মাধ্যমেই প্রথম দেখি মাতৃভাষায় প্রেসক্রিপশন লেখা। বাংলায় চিকিৎসা সংক্রান্ত সমার্থক শব্দভাণ্ডার তৈরি করেছিলেন ড. নৃপেন ভৌমিকও। মাতৃভাষায় প্রেসক্রিপশন কেন প্রয়োজন? প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব-নিরক্ষর লোকজন ইংরেজি বোঝেন না। চিকিৎসকের লেখা খটমট ইংরেজিতে লেখা প্রেসক্রিপশন তাদের কাছে দুর্বোধ্য। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই প্রান্তিক মানুষদের প্রেসক্রিপশনে কী লেখা আছে তা বুঝতে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। এহেন প্রেক্ষাপটেই বাংলায় প্রেসক্রিপশন লেখার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তার শুরু।
আলোচনার শুরুতেই ড. অশোকানন্দ কোনার বলেন, ডাক্তারি পড়তে গিয়েই দেখি মোটা মোটা ডাক্তারি বইয়ের স্প্যানিশ, ইটালি, জার্মান সংস্করণ রয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষায় নেই। বাংলায় চালু করা গেলে ভালো হত। সম্প্রতি ধ্রুপদি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে বাংলা। কিন্তু সেই ভাষায় প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লেখা হলে ওষুধের দোকানের লোক বুঝতে পারবে তো? সমস্ত ওষুধই তো ইংরেজি নামে। এমন প্রশ্নও ওঠে আলোচনা সভায়। চিকিৎসকরা বলছেন, ওষুধের নাম না হোক, অন্তত দিনে কতবার কোন সময় ওষুধ খেতে হবে, সেটা বাংলায় লেখা হোক। অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কিরণ মুখোপাধ্যায়ের মতো অনেকে ইতিমধ্যেই বাংলায় লিখতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি সচেতনভাবে প্রেসক্রিপশনে অনেক কিছুই বাংলায় লিখি। অস্টিওপোরেসিসের একটা ওষুধ মাসে একদিন একটা খেতে হয়। সেটা লিখি মাসে একবার একটা ট্যাবলেট।’’
আদতে একজন রোগী চিকিৎসকের কাছে তো শুধু রোগের যন্ত্রণা নিয়ে আসেন না। সঙ্গে থাকে তাঁর মানসিক যন্ত্রণাও। নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদারের কথায়, সেই মানসিক যন্ত্রণা কাটানোর সহজ সিঁড়ি মাতৃভাষা। তাঁর কথায়, ‘‘বেশিরভাগ চিকিৎসকই তো কবি। যেভাবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ভর করে কবি লিখে ফেলেন কবিতা, এত মানুষের সঙ্গে মিশতে মিশতে চিকিৎসকও কবিতার মতো সহজ করে প্রেসক্রিপশন লিখতেই পারেন।’’কেউ কেউ আবার মনে করছেন তড়িঘড়ি এটা ছেলেমানুষি চিন্তা। চিকিৎসকরা বলছেন, হোক না ছেলেমানুষি। নতুন কিছু শুরু করতে গেলে তো ছেলেমানুষিরই প্রয়োজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.