অভিরূপ দাস: করোনা (CoronaVirus) আবহে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন চিকিৎসকরা। এদিকে “হাই রিস্ক অ্যালাওয়েন্স” দেওয়ার বদলে বেসরকারি হাসপাতালে তাদের পেমেন্ট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক মন্দার কারণ দেখিয়ে কোথাও বেতন বন্ধ কোথাও বা বেতন দেরিতে হচ্ছে। একদিকে যখন লক্ষাধিক টাকা বিল করছে বেসরকারf হাসপাতাল, সেখানে অনেক চিকিৎসককেই খেপে খেপে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দ্রুত স্বাস্থ্যভবনকে অ্যাডভাইসরি লাগু করার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
বেসরকারি হাসপাতালে অত্যধিক বিল হওয়ার কারণে একাধিকবার রোগীর পরিবারের হাতে হেনস্তা হতে হয়েছে চিকিৎসকদের। সেসময় তাঁরা বারবারই দাবি করেছেন বিলের এই অংশের জন্য চিকিৎসকরা কোনওভাবেই দায়ী নন। এবার নাম না করে কার্যত মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে নালিশ জানালেন চিকিৎসকদের একাংশ। কোভিড (COVID-19) আবহে বেসরকারি হাসপাতালে বেতন কাটছাঁটের অভিযোগ নিয়ে এবার স্বাস্থ্য সচিবের দ্বারস্থ চিকিৎসকদেরই একাংশ।তাঁদের দাবি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন চিকিৎসকরা। এমতাবস্থায় সঠিক সময় বেতন না পেলে কাজ চালানো দুষ্কর। স্বাস্থ্যসচিবের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে সরকার যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার আগে চিকিৎসকদের নিয়োগপত্র যাচাই করে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। শুধু নিজেদের বেতনই নয় রেমডিসিভির, টোসিলিজুমাবের মতো বহুমূল্য ওষুধ যাতে সাধারণ মানুষ সস্তায় পায় এমন দাবিও রেখেছেন চিকিৎসকরা।
খুব শীঘ্রই চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরকারি হাসপাতালে ডেডিকেটেড কোভিড বেডের ঘোষণা করা হবে। বুধবার ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের (Narayan Swarup Nigam) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি প্রতিনিধি দল। সেখানেই করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকদের জন্য দ্রুত নির্দিষ্ট বেড ঘোষণা করার কথাও জানান তারা। স্বাস্থ্যসচিবের পক্ষ থেকেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দ্রুত তা ঘোষণা করা হবে। এদিন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করেন ডা. কৌশিক চাকী, ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত এবং ডা. পুণ্যব্রত গুণ।
শুধু তাই নয়, মাতৃমঙ্গল, ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের মতো বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে দরিদ্র প্রান্তিক অঞ্চলের প্রসূতিরা আসেন। সন্তানসম্ভবা মা এবং সদ্যোজাতর এখন কোভিড টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক। বেসরকারি এই সমস্ত হাসপাতালে অনেক সময়ই কোভিড টেস্টের টাকা দিতে পারে না দরিদ্র পরিবারগুলো। স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে এই পরিবারগুলোর জন্য সুরাহা চাইল ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম। স্বাস্থ্যসচিবের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এই সমস্ত হাসপাতালের নিকটবর্তী সরকারি ল্যাব থেকে বিনাপয়সায় কোভিড টেস্ট করিয়ে দেওয়া হবে। শুধুমাত্র লালারস সংগ্রহ আর তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে। ১৬ দফা দাবি নিয়ে বুধবার স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের সঙ্গে দেখা করল ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম।
কোভিড আবহে নতুন হাই ফ্লো নাসাল অক্সিজেন থেরাপি ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়েছে জেলার হাসপাতালগুলিকে। কিন্তু অনেক হাসপাতালে এখনও তা ইনস্টল হয়নি। দ্রুত তা লাগিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন রাখা হয়েছে। বৈঠক শেষে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক, ডা. কৌশিক চাকী জানিয়েছেন, গত ৩ সপ্তাহ ধরে ডক্টরস ফোরাম নিজেদের কাজকর্মের বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে বেরিয়েছে। সেখানে যেমন সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা শোনা হয়েছে তেমন স্বাস্থ্যকর্মীদের সমস্যাও সামনে এসেছে। অতিমারীতে সমস্যা অনুধাবন করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের শয্যার সংকট রয়েছে। অনেক জায়গায় তাঁদের পাওনা বকেয়া অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। আজ সেই তিন সপ্তাহের অভিজ্ঞতা স্বাস্থ্য সচিবকে জানিয়েছি। প্রায় ৫০০ শয্যার ইএসআই হাসপাতালে ইএসআই কার্ড হোল্ডাররা করোনা চিকিৎসা পাচ্ছেন। তাদের জন্য নন-কোভিড চিকিৎসা শুরুরও দাবি জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.