অভিরূপ দাস: জামা, জুতো নয়। একেবারে নতুন হৃৎস্পন্দন। তা নিয়েই পুজোয় বেরোবেন দিলীপ রায়। আশপাশের কেউ জানতেও পারবেন না, দশভুজাকে দেখে উত্তেজনায় বুকের মধ্যে যে ‘ধুকপুক’, তা তার নিজের নয়। অন্যের থেকে ধার করা!
বছর চল্লিশের দিলীপের বাড়ি হাওড়া (Howrah) আমতার নওয়াপাড়ায়। দীর্ঘদিন ধরেই আক্রান্ত ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি (Dilated cardiomyopathy) রোগে। এ অসুখে হৃৎপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দিলীপবাবুর হার্টের পেশিগুলি রক্তকে পাম্প করতে পারছিল না। দুর্বল হয়ে পড়েছিল হার্টের প্রাচীর। হৃৎপিণ্ডের পেশি স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে শক্ত হয়ে গিয়েছিল।
প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের শরীরে পাঁচ লিটার রক্ত চলাফেরা করে। রক্তের লোহিত রক্তকণিকা অক্সিজেন নিয়ে যায় প্রতিটি অঙ্গে। শ্বেত রক্তকণিকা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জোরদার রাখে। হার্টের পেশি রক্ত পাম্প করতে না পারায় শরীরের প্রতিটি অঙ্গে প্রয়োজনীয় রক্ত পৌঁছচ্ছিল না, ফলে দিলীপবাবুর শরীরে রোগ দুই প্রক্রিয়াই ব্যাহত হচ্ছিল।
দীর্ঘদিন ধরে এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে ভরতি ছিলেন তিনি। তাঁর হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন আবশ্যিক ছিল। বেসরকারি ক্ষেত্রে এই প্রতিস্থাপনের খরচ বিপুল। সরকারিতে তা বিনামূল্যে হয়। কিন্তু চাইলেই তো হল না। প্রয়োজন ছিল শরীরের সঙ্গে মিল খায় এমন হৃৎপিণ্ডের। বর্ধমান পূর্বের জামুদহ গ্রামের নব কিস্কুর মৃত্যুর পর সেটাই সম্ভব হল। পথদুর্ঘটনায় গুরুতর আহত নব কিস্কুকে আনা হয়েছিল এসএসকেএমে। সেখানে ব্রেন ডেথের পর তাঁর হৃৎপিণ্ডটি দান করেন পরিবারের লোকেরা।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিয়াল্লিশের নব কিস্কুর হৃৎপিণ্ডই বসানো হয়েছে দিলীপ রায়ের শরীরে। হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের এই টিমে ছিলেন ডা. শুভেন্দু মহাপাত্র, ডা. সন্দীপকুমার কর, ডা. দেবযানী সাহা, ডা. শোভন শিকদার, ডা. কাকলি ঘোষ, ডা. চৈতালি সেন। ছিলেন কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেশিওলজি বিভাগের গিরিরাজ শর্মা এবং পায়েল ত্রিগুনায়েত।
ডা. সন্দীপকুমার কর জানিয়েছেন, “দিন সাতেক দিলীপবাবুকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তারপর উনি ফিরতে পারবেন নিজের বাড়িতে। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর মাসে একবার ওঁকে চেকআপ করতে হবে।” যুগান্তকারী হার্ট প্রতিস্থাপনের পর চিকিৎসকরা অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রয়াত নব কিস্কুকে। যাঁর হার্ট ধুকপুক করছে দিলীপবাবুর শরীরে। প্রতিস্থাপন টিমের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, ওষুধ খেয়ে থাকলে দিলীপবাবু খুব বেশি আর দু’বছর বাঁচতে পারতেন। কিন্তু শরীরে নতুন হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পর উনি দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে পারবেন। সরকারি তরফে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয় প্রতিস্থাপন হওয়া রোগীদের। সময়মতো সেই ওষুধ সংগ্রহ করে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.