ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: ভয়ংকর কাশি। মাঝেমধ্যেই বমি। আঠারো বছরের কিশোরের কী যে হয়েছে ঘুণাক্ষরে টের পাননি বাড়ির বড়রা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে (Nil Ratan Sircar Medical College and Hospital) ধরা পড়ল সত্যিটা। ফিতাকৃমি ঢুকেছিল বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত বাদুলারা গ্রামের নুর আলম খানের পেটে। সেখান থেকেই যকৃতে তৈরি হয় ডিমের মতো এক মাংসপিণ্ড। চিকিৎসা পরিভাষায় যা হাইডেটেড সিস্ট (Hydatid disease)।
কীভাবে শরীরে ঢুকল ফিতাকৃমি? নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ইউনিট ৪ শল্যচিকিৎসা বিভাগের চিকিৎসক ডা. উৎপল দে জানিয়েছেন, সাধারণত কুকুরের দেহে এ ধরনের ফিতাকৃমি পাওয়া যায়। কুকুরের মলে সেই কৃমির ডিম অনেক সময়ে মিশে থাকে। সারমেয় মাঠে-ঘাটে মলত্যাগ করে ফলে তা ঘাসের সঙ্গে মিশে যায়। গ্রামের দিকে অনেকেই খালি পায়ে চলাফেরা করেন, খেত থেকে কাঁচা সবজি তুলে খান। সে কারণে তাঁদের মধ্যে ফিতাকৃমির সংক্রমণ দেখা যায়।
ডা. উৎপল দের কথায়, সকলের উচিত চটি পরে হাঁটাচলা করা। শুধু তাই নয়, আধসিদ্ধ রান্না থেকেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে ফিতাকৃমি। চিকিৎসকরা বলছেন, কেন বারবার হাত-মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে খাবার খেতে বলা হয় তা হাড়ে-হাড়ে টের পেল নুর। নীলরতনের চিকিৎসকরা যখন ওর যকৃৎ থেকে বলের সাইজের সিস্ট বার করলেন, তাতে কিলবিল করছিল ফিতাকৃমির কয়েকশো লার্ভা! অস্ত্রোপচারের সময়ে সার্জনের হাত কেঁপে সেই সিস্ট ফেটে গেলেই কয়েক হাজার লার্ভা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ত। তখন নুরকে বাঁচানোই মুশকিল হতো।
দুর্ঘটনাবশত শরীরে ফিতাকৃমি প্রবেশ করে রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে সিস্ট বা মাংসপিণ্ড তৈরি করে। এই সিস্ট যকৃৎ আর মাথার ত্বকের তলাতেই সর্বাধিক দেখা যায়। আগে সাধারণত এই অস্ত্রোপচার পেট কেটে করা হত। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ল্যাপারোস্কোপিক প্রক্রিয়ায় যকৃৎ থেকে বের করা হল এই ডিম্বাকৃতি সিস্ট। অধ্যাপক উৎপল দে-র তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচারে ছিলেন ডা. রিয়া আগরওয়াল, ডা. সৌমিতা পাল। দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় বাইরে আনা হয় সিস্টটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.