ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: টিক টক টিক টক। ঘুরছে ঘড়ির কাঁটা। পাল্লা দিয়ে ছুটছে চিকিৎসকের হাত। হাতে সময় মাত্র চার মিনিট। তার মধ্যেই মাংসপিণ্ড-সহ বাদ দেওয়া ধমনির একটা অংশ পুনর্নির্মাণ করতে হবে। নাহলে যে বিপদ! রোগীর মাথায় রক্ত সঞ্চালনা অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছিল বন্ধ। ৪ মিনিট পেরলেই মরতে শুরু করত মস্তিষ্কের কোষ। চিরকালের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারতেন রোগী। কিন্তু চিকিৎসকদের পারদর্শীতায় প্রাণে বাঁচলেন রোগী। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে নতুন জীবন পেয়েছেন রাজেশ রাউত (৪১)।
জীবনদায়ী ওষুধ পৌঁছনোর কাজ করেন। দেবীপক্ষের আগে তাঁরই সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল মৃত্যু। কয়েকদিন ধরেই গলার ডানদিকের উপরে ব্যথা ব্যথা করছিল রাজেশ রাউতের। চিকিৎসকের কাছে এসে পরীক্ষা করাতেই মাথায় হাত! শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যারোটিড বডি টিউমার! ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু পাঁজা জানিয়েছেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্যারোটিড আর্টারি বা ক্যারোটিড ধমনি। হৃৎপিণ্ড থেকে মূল ধমনি বা আর্টারি রক্তকে ছড়িয়ে দেয় সারা শরীরে। এই ক্যারোটিড আর্টারি দু’ভাগে বিভক্ত। একটি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারি যা মাথায় রক্ত নিয়ে যায়, অন্যটি এক্সটারনাল ক্যারোটিড আর্টারি যা গলার আশপাশে রক্ত বহন করে। রাজেশ রাউতের মাংসপিণ্ডটি এই ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারির চারভাগের তিনভাগ বন্ধ করে দিয়েছিল। আঁকড়ে ধরেছিল অন্য আর্টারিটিকেও। ফলে স্বাভাবিকভাবে মাথায় পৌঁছতে পারছিল না রক্ত।
এ যেন পুজোর রাস্তার ট্র্যাফিক জ্যাম মাথায়। যা না সরালে মৃত্যু নিশ্চিত। জীবনের রাস্তার সে ট্র্যাফিক জ্যাম সরাতে পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন চিকিৎসকরা। রাজেশ সংসারের একমাত্র রোজগেরে। বাড়িতে ছোট মেয়ে, স্ত্রী। বিরল টিউমারের খবরে পুজোর আগে বিষাদ নেমে এসেছিল রাউত পরিবারে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি মারাত্মক। অপারেশন টেবিলেই কিছু হয়ে যেতে পারে। একাধিক হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজেশ। কিন্তু ঝুঁকি নিতে চাননি কেউই। শেষমেশ অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু পাঁজা, ভাস্কুলার সার্জন ডা. তমাশিস মুখোপাধ্যায় শুরু করেন প্রস্তুতি। সহজ ছিল না অস্ত্রোপচার। টিউমারটি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারিকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছিল যে বাদ দিতে হত আর্টারির কিছু অংশকে। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন এ অস্ত্রোপচারে কিছুক্ষণের জন্য রোগীর মাথায় রক্ত সঞ্চালন বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু তা কখনওই ৪ মিনিটের বেশি নয়। তার মধ্যেই ড্যাক্রন ভাস্কুলার গ্রাফটের মাধ্যমে ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারির বাদ দেওয়া অংশটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।
অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু পাঁজার কথায়, ঝুঁকি ছিল মারাত্মক। যেহেতু ব্লাড ভেসেলে টিউমার অস্ত্রোপচার করার সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারত। মস্তিষ্কে রক্ত যায় যে ব্লাড ভেসেল দিয়ে তা সামান্য সময় বন্ধ থাকলে রোগীর স্ট্রোক হতে পারত। নিপুণ হাত নতুন জীবন দিয়েছে রাজেশকে। অস্ত্রোপচারের পর এখন রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ। তাঁর কথায়, “মায়ের মণ্ডপে দাঁড়িয়ে জীবনদায়ী চিকিৎসকদের দীর্ঘায়ু কামনা করলাম।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.