ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: চিচিং ফাঁক। এক মন্ত্রে গুহার দরজা খুলেছিলেন আলিবাবা। ‘ক্র্যানিওটোমি’র মাধ্যমে মাথার খুলি ফাঁক করে রোগীকে বাঁচালেন ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সের (Institute of Neurosciences Kolkata) চিকিৎসকরা। অত্যন্ত জটিল এই অস্ত্রোপচার (Operation) আদতে মস্তিষ্কের এক প্রকার সার্জারি। যুদ্ধক্ষেত্রে মাথায় বুলেট অথবা ধাতব কোনও বস্তু ঢুকলে এই পদ্ধতিতেই আহতকে বাঁচিয়ে তোলেন শল্য চিকিৎসকরা। চিমটে দিয়ে আলতো করে খুলে ফেলা হয় খুলির হাড়। যে হাড় খুলেই নিউরোসায়েন্সে নজরে এল বস্তা সেলাইয়ের পেল্লায় সূঁচ! নাক দিয়ে ঢুকে যা সোজা চলে গিয়েছিল মাথায়। সূঁচের মাপ দেখে চোখ কপালে তুলেছেন শশধর দত্ত (৩৫)। বেহালা ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না ছয় ইঞ্চি লম্বা ধাতব শলাকা নাক দিয়ে ঢুকে গিয়েছিল। ঘটনার সময় যে সজ্ঞানে ছিলেন না তিনি!
দিন কয়েক আগের কথা। মাত্রাছাড়া মদ্যপান করেছিলেন শশধরবাবু। তারপর যে কী ঘটেছিল তাঁর নিজেরও মনে নেই। হাসপাতালে যখন আসেন নাক দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়ছে। এক্স-রে করা হয় রোগীর। হয় সিটি স্ক্যান, মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম। দেখা যায়, ধাতব লম্বা এক শলাকা নাক দিয়ে ঢুকে সোজা মাথায় প্রবেশ করেছে। নাকের নরম হাড় ভেদ করাতেই গল গল করে ঝরছে রক্ত। জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। তৈরি হয় মেডিক্যাল টিম। যে টিমে ছিলেন ডা. চন্দ্রমৌলি বালাসুব্রমনিয়ান, নিউরোসার্জন ডা. আদিত্য মন্ত্রী, হেড অ্যান্ড নেক সার্জন ডা. অমিতকুমার ঘোষ, স্পাইনাল অ্যান্ড নিউরো সার্জন ডা. ক্রিস্টোফার জার্ভার।
পাঁচ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের শুরুতেই খুলে ফেলা হয় মাথার খুলি। দেখা যায় নাক দিয়ে ঢুকে খুলির ভিতরের ক্রেনিয়াল ক্যাভিটি অংশকে ছুঁয়ে আছে তীক্ষ্ণ সূঁচ। মাথার খুলির দিকেই সুচের তীক্ষ্ণ অংশটা। সেখান দিয়ে সূঁচ বের করা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকির। যে কোনও মুহূর্তে মাথার ভিতরের ধমনি ফুটো হয়ে যেতে পারত।
ডা. অমিতকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের ভিতরে ধমনি থেকে রক্তক্ষরণ হলে ‘ক্লিপিং’ করতে হয়। সে কারণে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল ‘টেম্পোরারি অ্যানুরিজম ক্লিপ।’ যদিও শেষমেশ তা ব্যবহার করতে হয়নি। খুলির মধ্য দিয়ে বের করা যাবে না দেখে নাক দিয়েই তা বের করেন চিকিৎসকরা। প্রথমে হাত দিয়ে চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। চেষ্টা বিফলে যাওয়ায় ব্যবহার করা হয় রনজার ফরসেপ যন্ত্র। সাঁড়াশির মতো দেখতে এ যন্ত্রের সামনেটা কাঁকড়ার সরু দাঁড়ার মতো। নাক দিয়ে ওই যন্ত্র ঢুকিয়েই টেনে বার করা হয় বস্তা সেলাইয়েই সূঁচ। আপাতত সম্পূর্ণ সুস্থ শশধরবাবু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.