অভিরূপ দাস: করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে সংক্রমিত হচ্ছেন ডাক্তাররা। তাঁদের থেকে মারণ ভাইরাস ছড়াচ্ছে বৃদ্ধ মা-বাবার শরীরেও। ভাইরাসের ছোবল ঠেকাতে পারছেন না প্রবীণ প্রজন্ম। শহরের একাধিক হাসপাতালের অগুনতি চিকিৎসক আপনজন বিয়োগের ব্যথায় বিহ্বল। যার সর্বশেষ নিদর্শন মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইনচার্জ ডাক্তার তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক করোনা রোগীকে নতুন জীবন দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর বাবাও করোনা আক্রান্ত হন। কিন্তু এ যাত্রায় শেষরক্ষা হয়নি, বাবাকে হারিয়েছেন তন্ময়বাবু।
এই ঘটনার পর চিকিৎসকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, ”প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগী দেখছি। আমাদের থেকে পরিবারের লোকজন আক্রান্ত হচ্ছেন। কবে আমাদের পরিবারের সদস্যদেরও টিকা দেওয়া হবে?” উত্তর মেলেনি। টিকাকরণের প্রথম ধাপে ভ্যাকসিন (Corona vaccine) পেয়ে গিয়েছেন চিকিৎসকরা। ফলে তাঁদের শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করলেও সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে না। কিন্তু তাঁদের মাধ্যমে যখন ভাইরাস প্রবেশ করছে বাড়ির প্রবীণদের শরীরে, তখনই বড়সড় সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
চিকিৎসকদের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দিতে হবে। এমন দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যদপ্তরে চিঠি লিখেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম। বৃহস্পতিবার ফের একবার প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি দিল WBDF। চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে ডা. রাজীব পাণ্ডে জানিয়েছেন, ”ভ্যাকসিনের নোডাল অফিসার যাঁরা, তাঁদের কাছেও আমরা চিঠি দিয়েছি। একদিকে শতাধিক চিকিৎসকের মৃত্যু, অন্যদিকে ডাক্তারবাবুদের পরিবারের লোকেরা একের পর এক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসকদের পরিবারের সদস্যদের দ্রুত টিকা না দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।”
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের সুনামি দেশজুড়ে। তার মাঝে চিন্তা বাড়িয়েছে ভ্যাকসিন সংকট। পয়লা মে থেকে তৃতীয় পর্যায় অর্থাৎ ১৮ ঊর্ধ্বদের টিকাকরণের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বহু জায়গাতেই সমস্যা বাড়িয়েছে ভ্যাকসিনের অপ্রতুল জোগান। সেরাম ইনস্টিটিউটের আধিকারিক ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের আকাল এখনই মিটিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। যা শুনে আতঙ্কিত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা. সৌম্যদীপ ঘোষ। মেডিক্যাল কলেজের কোভিড সিসিইউতে ডিউটি করছেন সৌম্যদীপ। এই হাসপাতালেই কোভিড ওয়ার্ডে কর্মরত একাধিক চিকিৎসককে প্রিয়জন বিয়োগের যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। ডা. ঘোষের কথায়, ”ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের দাবি সমস্ত চিকিৎসকের দাবি। অবিলম্বে পরিবারের সদস্যদের টিকাকরণ না হলে আমরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ব।” তাঁদের আবেদনে কত দ্রুত ব্যবস্থা নেয় রাজ্য সরকার, সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.