ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: বিয়ে তো হবে। বর কিংবা কনে হাজির থাকবেন তো? দু’জনের একজন চিকিৎসক হলে এখন এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। প্রতিদিনই যে অগুনতি চিকিৎসক কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন। সাতদিনের জন্য চলে যাচ্ছেন নিভৃতবাসে। যেখানে হবু বর-কনে দু’জনেই চিকিৎসক, সেখানে পরিবারের লোক ইষ্টনাম জপ করছেন। “সংক্রমণটা যেন এখন না হয় ঠাকুর।”
আজ বাদে কাল বিয়ে। রোজ যেতে হচ্ছে হাসপাতালে। এমন চিকিৎসকের সংখ্যা কম নয়। মনে ভয় নিয়েই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন স্টেথোধারীরা। করোনার নতুন স্ট্রেন ওমিক্রন মারাত্মক ছোঁয়াচে। ‘বি.১.১.৫২৯’-এ ৫০ বার জিনগত পরিবর্তন ঘটেছে! শুইয়ে দিচ্ছে চিকিৎসকদের। এ কারণে তৃতীয় ঢেউয়ে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও দ্বিগুণ। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের একাধিক বিভাগের ১০০ শতাংশ চিকিৎসক আক্রান্ত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ডেল্টা স্ট্রেনে আক্রান্ত হলে নিদান ছিল ১৭ দিন হোম আইসোলেশনের। নতুন ওমিক্রনে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৭ দিনে। তাও বা কম কী?
বিয়ের দু’দিন আগে আক্রান্ত (COVID-19) হলে তো বিয়ে বউভাত দুই-ই মাটি। তা নিয়ে এখনই ভাবতে চান না ডা. শুভাগত চক্রবর্তী। অ্যাপোলো হাসপাতালের হেড অ্যান্ড নেক সার্জনের বিয়ে মাস পেরোলেই। বিয়েবাড়ি ভাড়া, ক্যাটারিং, বিয়ের দিনের জামাকাপড় সব ফাইনাল। শেষ মুহূর্তে করোনা কেঁচিয়ে দেবে না তো মালাবদল? ডা. শুভাগত চক্রবর্তীর কথায়, “আম অগ্রাধিকার রোগী। রোগী অসুস্থ থাকলে বিয়ের দিন সকালেও আমি ডিউটি করব।” কিন্তু সত্যিই যদি বিয়ের মুখে কোভিড পজিটিভ হন? ডা. চক্রবর্তীর কথায়, অসুখটা ছোঁয়াচে। তখন আমিও চাইব না আমার থেকে কেউ মধ্যে সংক্রমিত হোক। সেক্ষেত্রে বিয়ে পিছোতে হবে। হাউসস্টাফশিপ করছেন ডা. মৌ তৃষা পাইন। তাঁরও বিয়ে সামনেই। পেশার তাগিদে তিনিও ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতালে। যে কোনও দিন সংক্রমিত হতে পারেন জেনেই। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের তরুণ দুই চিকিৎসকের বিয়েও সামনে। হাসপাতালের সুপার ডা. অরবিন্দ রায় জানিয়েছেন, রোজই প্রচুর চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছেন। যে কারণে আউটডোর বিভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, “চিকিৎসকরা জানেন এই স্ট্রেনটা যেরকম ছোঁয়াচে যে কোনও দিন যে কেউ আক্রান্ত হবেন। তবু তাঁদের কুর্নিশ জানাব। কারণ, বিয়ের জন্য কেউ আগে থেকে ছুটি নিচ্ছেন না। কোভিড আক্রান্ত হলে তবেই ছুটি নিচ্ছেন। তাও মাত্র ৭ দিনের জন্য।”
রাজ্যের ডেন্টাল কাউন্সিলের রাজ্য সভাপতি ডা. রাজু বিশ্বাস। তাঁর বক্তব্য, “আমার চেনা জানা বহু জুনিয়র ডাক্তারের বিয়ে সামনেই। তাঁরা কিন্তু ডিউটি চালিয়ে যাচ্ছেন।” একদিকে মানুষ করোনাবিধি উপেক্ষা করে বর্ষবরণে মাতল। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সকলকে। অন্যদিকে অগুনতি চিকিৎসক নতুন জীবনে প্রবেশ করার দিনেও সুস্থ থাকবেন কি না বুঝতে পারছেন না। আমজনতার এটা দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত বলেই মন্তব্য ডা. রাজু বিশ্বাসের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.