অভিরূপ দাস: এক, দুই নয়, টানা দশ মাস। কিশোরের নিশ্বাসে বাঁশির শব্দ। জোরে কাশলেই বাজছে আওয়াজ। সেই যন্ত্রনার মুক্তি হল এসএসকেএম হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের (Baruipur) বাসিন্দা রাইহান লস্কর। বছর বারোর রাইহানের বিপদ ঘটে বহুদিন আগে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ঘটনা। চিপসের প্যাকেটের মধ্যে ফ্রি পাওয়া খেলনা বাঁশি ঢুকে যায় গলায়। তারপর উঠতে-বসতে, মুখ খুললেই বাঁশির শব্দ। রাইহানের বাবা আজিজুল জানিয়েছেন, টের পেতে কয়েকদিন সময় লাগে। পুকুরে স্নান করতে গিয়ে দেখা যায় বেশিক্ষণ ডুবে থাকতে পারছে না রাইহান। হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে বুক। জিজ্ঞেস করতে সে মাকে জানায় বাঁশি নিয়ে খেলার সময় তা তার গলায় ঢুকে গিয়েছে। বুকে ব্যথাও হচ্ছে। বার কয়েক বমি করার চেষ্টা করলে অস্বস্তি বাড়তে থাকে।
কলকাতায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় কিশোরকে। সেখানে দিন সাতেক ভরতি ছিল রাইহান। লাভ হয়নি। বের করা যায়নি আটকে থাকা বাঁশি। ফের বাড়ি ফিরে যায় রাইহান। তারপর কেটে গিয়েছে সময়। বাঁশি আটকে ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। সদ্য রাহাইনকে নিয়ে চিন্তায় পরে যান বাড়ির লোকেরা। স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে দেখালে তাকে রেফার করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। ২৪ নভেম্বর রাইহানকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এসএসকেএম হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি সেন্টার অফ এস্কেলেন্স। শুধু এ রাজ্য নয়, দেশের নানান প্রান্ত থেকে রোগী আসেন এই কেন্দ্রে। রাইহানকে এখানে আনার পর চিকিৎসকেরা এক্স-রে, সিটি স্ক্যান করে দেখে নেন ফুসফুসের ঠিক কোন অংশে আটকে রয়েছে বাঁশিটা।
ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজির ডিরেক্টর অরূণাভ সেনগুপ্তর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি। অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন চিকিৎসক ডা. অরিন্দম দাস, ডা. সায়ন হাজরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বুকে ব্যথার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টও শুরু হয়েছিল কিশোরের। প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে রাইহানের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পরেই চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার শুরু করেন। শ্বাসনালী থেকে ব্রঙ্কোস্কোপি করে প্লাস্টিকের বাঁশি বার করা হয়। অপটিক্যাল ফরসেপের সাহায্যে শ্বাসনালী থেকে বাঁশির অংশ বার করা গিয়েছে। এখন ভাল আছে কিশোর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.