অভিরূপ দাস: গলব্লাডারে স্টোন? অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথায় কাতর? মাত্র ৫০ হাজারে অপারেশন করান। অনলাইনে এমনই বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ পেতেছে দালালচক্র। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ বাংলার সার্জনরা। বলছেন, এটা চিকিৎসা না ফ্ল্যাট কেনাবেচা, বোঝা যাচ্ছে না। এহেন বিজ্ঞাপন সরাসরি অমান্য করছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলকে। কাউন্সিলের রেগুলেশনের ৭.১৯ পরিচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে, কোনও চিকিৎসক রোগী ধরার ক্ষেত্রে কোনওরকম দালাল, এজেন্ট ব্যবহার করতে পারবেন না। তাহলে কী করে হচ্ছে এমনটা?
দেশের শল্য চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ মিনিমাল অ্যাসেস সার্জনস অফ ইন্ডিয়া বা এএমএএসএআই। যার সদস্য সংখ্যা এই মুহূর্তে ১১ হাজারেরও বেশি। গোটা বিষয়টি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ সংগঠন। এই মুহূর্তে বঙ্গে এই সংগঠনের সম্পাদক প্রসিদ্ধ শল্য চিকিৎসক ডা. মাখনলাল সাহা। তিনি জানান, অনলাইনে বিজ্ঞাপনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (PM Narendra Modi) চিঠি দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে এএমএএসএআই জানিয়েছে প্র্যাক্টো, হেলথিয়ানস, প্রিস্টিনে-র মতো বেশ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। গ্রাহকদের সস্তায় চিকিৎসা পাইয়ে দেওয়ার বেআইনি বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে তারা। মুষ্টিমেয় শল্যচিকিৎসক এদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। কী সেই চুক্তি? অপারেশন করাতে একটি লোভনীয় রেট দিচ্ছে এই সমস্ত অ্যাপ। তার মধ্যেই ধরা থাকে দালালদের কমিশন। অস্ত্রোপচার করার পর ওই টাকা কেটে নিয়ে শল্যচিকিৎসককে পাওনা মেটানো হচ্ছে।
রাজ্যের শল্যচিকিৎসকদের সংগঠন পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, অনেক চিকিৎসকের পসার নেই। তাঁরাই এই ধরনের অ্যাপের মাধ্যমে রোগী ধরছেন। ডা. মাখনলাল সাহার বক্তব্য, “অস্ত্রোপচার কোনও বাড়ি কেনাবেচা নয়। যেখানে, সকালে রোগী এল, দুপুরে অপারেশন হল। আর বিকেলে বাড়ি ফিরে গেল। অস্ত্রোপচার করার আগে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাঁর মেডিক্যাল হিস্ট্রি পড়তে হয়। কোনও অসুখ হওয়ার নেপথ্যে নানা কারণ থাকতে পারে। সেসব না জেনেবুঝে দুম করে অস্ত্রোপচার করা যায় না। এই ধরনের অ্যাপের মাধ্যমে যাঁরা অস্ত্রোপচার করাচ্ছেন ভবিষ্যতে তাঁদের কোনও শারীরিক ক্ষতি হলে তার দায় কে নেবে?”
এই একই প্রশ্নেই আতঙ্কিত চিকিৎসকমহল। সম্প্রতি এমনই এক অ্যাপ কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের সঙ্গে। ডা. সরকারকে তারা জানায়, কোনও রোগী অপারেশন করতে চাইলে আমরা আপনার নাম প্রস্তাব করব। বদলে আমাদের বিশেষ অঙ্কের টাকা দিতে হবে। পত্রপাঠ তিনি এই প্রস্তাব খারিজ করে দেন চিকিৎসক। তাঁর কথায়, “চিকিৎসকরা পণ্য নয়। অবিলম্বে এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যান করে দেওয়া উচিত। এ ধরনের ঘটনা চিকিৎসা ক্ষেত্রে চূড়ান্ত লজ্জাজনক।”
জানা গিয়েছে, শুধু মুষ্টিমেয় কিছু চিকিৎসক নয়, হাতেগোনা কিছু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও হাত মিলিয়েছে এ ধরনের অ্যাপ মালিকদের সঙ্গে। অ্যাপ কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়ে তারা পেশেন্ট কিনছে। শল্য চিকিৎসকদের দাবি, অবিলম্বে এই ধরনের অ্যাপকে ব্যান করে দিতে হবে। যে সমস্ত হাসপাতাল এদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে তাদেরও। ডা. মাখনলাল সাহা জানান, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমরা বিষয়টি জানাব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.