স্টাফ রিপোর্টার: সংগঠনের হাল জানতে ও পথ নির্দেশ দিতে বাংলায় এসে রবিবার দলের বিধায়ক-সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা (J P Nadda)। আর সেই আসরে বক্তব্য রাখার ডাক সটান ফিরিয়ে দিলেন প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। যে ঘটনা নিয়ে প্রবল আলোড়ন রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরে। রবিবার নিজের হোটেলে দলের সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন নাড্ডা। সেখানে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari)পর বক্তব্য রাখেন নাড্ডা।
সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়, এলাকার মানুষের সঙ্গে নিরন্তর জনসংযোগ, মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আন্দোলন ও জনমানসে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির উপর জোর দিতে বলেন তিনি। এরপরই উপস্থিত সাংসদ ও বিধায়কদের কাছে তাঁদের সমস্যার কথা শুনতে চান নাড্ডা। সূত্রের খবর, উপস্থিত ১২-১৪জন জনপ্রতিনিধি নিজেদের কথা সর্বভারতীয় সভাপতিকে জানালেও ভাষণ দিতে অস্বীকার করে মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন মেদিনীপুরের সাংসদ (MP) দিলীপ ঘোষ। এ প্রসঙ্গে দিলীপের বক্তব্য, এখানে বলার অনেক লোক আছেন! তাঁরাই বরং বলুন। দলীয় সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ছেঁটে ফেলার পর থেকেই দলের সঙ্গে নিজের দূরত্ব বাড়াচ্ছেন ক্ষুব্ধ দিলীপ। প্রকাশ্যে বা দলের অভ্যন্তরে মুখ খোলা বন্ধ রেখেছেন। এর জন্য তাঁর ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছে একাংশের।
অবশ্য এদিনই শুধু নয়। বিজেপির অন্দরে একের পর এক ক্ষোভ-বিক্ষোভ, বেনজির গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়েছে নাড্ডার এবারের সফরে। অভিযোগ, প্রথম দিন শনিবারই বিমানবন্দরে দলের সর্বভারতীয় সভাপতিকে স্বাগত জানাতে গিয়ে যথাযথ সম্মান জোটেনি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। যে গোঁসা থেকে রাতের গুরুত্বপূর্ণ কোর কমিটির বৈঠকে অনুপস্থিত থেকেছেন তিনি। তার আগে সায়েন্স সিটির ভরা প্রেক্ষাগৃহে নিজের বুথে জিততে না পারার জন্য নাম না করে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশ্যে কটাক্ষও করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। যদিও বিজেপির এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল।
এই বিষয়ে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ওই বৈঠককে গোষ্ঠীবাজির বৈঠক বলাই ভাল। ওটা নব্য আর আদি বিজেপির সার্কাস। ওই শোকসভা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’’ লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করাতে দু’দিনের সফরে কলকাতায় এসেছিলেন নাড্ডা। শনি ও রবিবার পঞ্চায়েত রাজ সম্মেলন ছাড়াও দু’বার কোর কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। রবিবার সকালে সাংগঠনের হাল জানতে ও পথনির্দেশ দিতে দলের বিধায়ক-সাংসদদের সঙ্গেও বসেছেন। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তাল কেটেছে সব আসরেই। সেজন্য কপালে গভীর ভাঁজ নিয়েই দিল্লি ফিরতে হয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে।
এর আগে নাড্ডার সফরের শুরুতেই ক্ষোভের উদগীরণ ঘটেছে শুভেন্দুর মুখেও। শনিবার সায়েন্স সিটির প্রকাশ্য সমাবেশে পঞ্চায়েতে জয়ী প্রার্থীদের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘একটা কথা শুধু বলব। নিজের এলাকায় সংগঠন শক্তিশালী করুন। নিজের এলাকা নিজেকে রাখতে হবে। মঞ্চে ভাষণ দিয়ে বড় বড় কথা বলবে? হবে না! চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। নিজের বুথ জিততে হবে। নিজের এলাকা জিততে হবে। নিজের অ্যাসেম্বলি জিততে হবে। নিজের জেলা জিততে হবে। তার পর গিয়ে ভাষণ দিতে হবে।’’
বিরোধী দলনেতা যখন এই কথা বলছেন, তখন মঞ্চে নাড্ডা ছাড়াও উপস্থিত রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। এবারের পঞ্চায়েতে বালুরঘাটে নিজের বুথ ও এলাকায় গোহারা হেরেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে ব্যাখ্যা, শুভেন্দুর এই মন্তব্য আসলে সুকান্তকে উদ্দেশ্য করেই। সেদিন রাতেই রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসে ছিলেন নাড্ডা। কিন্তু বিমানবন্দরে অসম্মানিত হওয়ার ক্ষোভে সেই বৈঠক এড়িয়ে কাঁথি চলে যান শুভেন্দু। দলের একটি সূত্রের দাবি, পরে নাড্ডার নির্দেশে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে ফোন করে বিরোধী দলনেতাকে ফোন করেন। তারপরই রবিবার দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.