ফাইল ছবি
রুপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়: “আমি সংযত চিরদিনই আছি। আমি আমার প্রয়োজনের বাইরে বলি না।” সেন্সর বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলে দলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে বিঁধলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তাঁর সাফ কথা, “বিরোধী দলের ভুলভ্রান্তি নিয়ে আওয়াজ তুলি, এটাই আমার ধর্ম। এটা আমি বলবই। আমি কারও রাস্তা আটকাইনি। নিজের রাস্তা নিজে তৈরি করেছি। সেই রাস্তাতেই হাঁটব।” যে চিঠি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সেই চিঠি সর্বসমক্ষে ফাঁস হল কী করে? সেই প্রশ্ন তুলেও পালটা তোপ দেগেছেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। কোনও সেন্সর নয়, তিনি যে নিজের স্টাইলেই চলবেন তা স্পষ্ট করে দিয়ে বুধবার ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে দিলীপবাবু বলেন, “আমি জানি না, এই ধরণের চিঠি মিডিয়াতে কী করে আসে। এটা সংগঠনের ব্যাপার। চিন্তার ব্যাপার আছে এর মধ্যে। যারা এসব করছেন তাঁরাই উত্তর দিতে পারবেন। এটা পার্টির ব্যাপার। যারা চিঠি লিখেছেন তাঁরাই জানেন। কীসের সেন্সর?”
প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির এই বার্তা রাজ্যে দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের কতিপয় নেতাদের এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের উদ্দেশেই বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলের পুরনো নেতা-কর্মীরা অবশ্য এই চিঠি ফাঁসের দায় সরাসরি রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য (Amit Malvya), রাজ্যের সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীদের (Suvendu Adhikari) উপরই চাপিয়েছে। দলের ওই আদি অংশ ও দিলীপ শিবিরের অভিযোগ,
রাজ্যে দলের সংগঠনের ভুলত্রুটি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন দিলীপ। তাই যাঁদের হাতে বর্তমানে দলের সংগঠন তলানিতে চলে গিয়েছে সেই মালব্য-শুভেন্দু-অমিতাভরাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি নালিশ করে কার্যত চাপ সৃষ্টি করে শীর্ষ নেতৃত্ব এই চিঠি পাঠাতে বাধ্য করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার নির্দেশে দিলীপ ঘোষকে ‘সেন্সর’ করেছে বিজেপি। দল ও দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করা থেকে দিলীপকে বিরত থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আলটপকা মন্তব্য থেকেও তাঁকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এই মর্মে মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংয়ের দেওয়া একটি চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। যা নিয়ে তোলপাড় গেরুয়া শিবির তো বটেই বঙ্গের রাজনৈতিক মহলে। দিল্লিতে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দিলীপ ঘোষকে ‘সেন্সর’ করার চিঠির সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু দিলীপ ঘোষকে পাঠানো চিঠি এভাবে প্রকাশ হয়ে যাওয়াতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও চরম বিব্রত। তাঁর পাঠানো চিঠি কীভাবে প্রকাশ্যে চলে এল তা নিয়ে নিজের ঘনিষ্ঠমহলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অরুণ সিংও (Arun Singh)।
সূত্রের খবর, বঙ্গ বিজেপির অন্দরের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সামলাতে এবং বির্তকে রাশ টানার লক্ষ্যেই দিলীপকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করা হয়েছিল। অথচ সেই চিঠিই বিতর্ক শামাল দেওয়া তো দূর অস্ত বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই চিঠি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তাদের মুখ পুড়েছে বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এইভাবে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে পাঠানো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর চিঠি ফাঁস হওয়ার ঘটনাও বিজেপিতে (BJP) বিরল। এবং বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় নেতারা ডিসিপ্লিন ভঙ্গ বলেই মনে করছে। কে বা কারা এবং কিভাবে চিঠি ফাঁস করেছে তা খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন বলে খবর।
তবে কেন্দ্রীয় বিজেপির একাংশের মতে, চিঠিটি জনসমক্ষে ফাঁস হওয়ার পিছনে বঙ্গ বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক তথা বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর ভূমিকা রয়েছে। দিলীপকে জনসমক্ষে হেনস্থা করার লক্ষ্যেই যে চিঠিটি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবং তাতে বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর একাংশের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দিলীপ শিবিরও অবশ্য এই একই অভিযোগে সরব। দিলীপ ঘোষ অবশ্য বুধবার সকালে দাবি করেন কোনও চিঠি হাত পাননি বলে। তাঁর কথায়, এর আগেও বহু চিঠি ভাইরাল হয়েছে মিডিয়াতে। প্রেসিডেন্টও পালটে যাচ্ছিল চিঠিতে, এই ঘটনাও ঘটেছে। এদিন পরে দিল্লির চিঠি হাতে পেয়েছেন দিলীপ। এদিকে, রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এদিন ফের বলেন, এই চিঠির বিষয়ে তাঁর কাছে কিছু জানা নেই। এদিকে, ‘সেন্সর’ চিঠি নিয়ে দিলীপ ঘোষকে মঙ্গলবার কটাক্ষ করেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়। এদিন দিলীপ বাবুলকে পালটা কটাক্ষ করে বলেন, “যিনি ন্যাশনাল লিগ ছেড়ে প্রাইমারি লিগে খেলছেন তার কথার কেউ পাত্তা দেয় না। রিজেক্টেড মাল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.