কৃষ্ণকুমার দাস: উত্তর কলকাতার একটি বসতিতেই মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা দুই থেকে লাফিয়ে ছয়জন হল। সূত্রের খবর, বেলগাছিয়ার ওই বসতি থেকে আর জি কর হাসপাতালে ভরতি তিনজন রবিবার মারাও গিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা ঠিক কি অসুখে মারা গিয়েছেন তা সোমবার রাত পর্যন্ত সরকারিভাবে জানা যায়নি। মৃত তিনজনেরই লালারস করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
সোমবার রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ বেলেঘাটা আইডিতে ভরতি ওই পজিটিভ রোগীদের একজনের মৃত্যু হয়। ৬১ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি রবিবার ভরতি হন। তাঁর বাড়ি বসতির জে কে ঘোষ রোডে। রাজ্যে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বেলেঘাটা আইডিতে ভরতি এই প্রথম কোনও রোগীর মৃত্যু হল। গত পাঁচদিনে শুধুমাত্র ওই এলাকায় পাঁচজনের মৃত্যু হওয়ায় বেলগাছিয়ার বসতিজুড়ে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এদের দু’জনের অবশ্য অন্য অসুখে মৃত্যু বলে কবর দিয়েছেন পরিজনরা। বেলগাছিয়ায় এমন সংক্রমণে চরম উদ্বিগ্ন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম দ্রুত শহরের সমস্ত বসতিতেই অসুস্থদের সন্ধানে কার্যত চিরুনি তল্লাশি অভিযান চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন পুরকর্মীদের।
পুরকমিশনার ও বিভাগীয় অফিসারদের নিয়ে জরুরি বৈঠকের পর সোমবার মেয়র বলেন, “রাজস্ব বিভাগ থেকে প্রতিটি বরোতে একজন ম্যানেজার ও ওয়ার্ড পিছু দু’জন সহকারি ম্যানেজার অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাই বস্তির বাড়ি বাড়ি ঘুরে রোগীর সন্ধান করবেন, চিকিৎসা ও হাসপাতালে ভরতিও করবে পুরসভাই।” মুম্বইয়ের ধারাবির পর এবার উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া বসতিতে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় যেভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে তাতে পুরসভার পাশাপাশি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যদপ্তরের শীর্ষকর্তারা। ঘটনার জেরে এদিন সকাল থেকে কার্যত সিল করে দেওয়া হয় বেলগাছিয়া বসতি। এলাকা থেকে কাউকে বাইরে আসা ও ভিতরে যাওয়া, দুটোই আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দার বাস ওই বসতিতে। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেন বলেন, “সমস্ত গরিব মানুষকেই পুরসভার তরফে চাল-ডাল-আলু ও বিস্কুট যেমন দেওয়া হয়েছে তেমনই ওষুধপত্রও দেওয়া হচ্ছে।” নতুন করে করোনা আক্রান্তর সন্ধান মিলতেই সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট দিয়ে এলাকা জীবাণুমুক্ত করা শুরু হয়েছে বলে কাউন্সিলর স্বীকার করেছেন। পরিস্থিতির জেরে এদিন পোস্তায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরির কাজ শুরু করেছে পুরসভা। সিঁথিতে আবাসনের হস্টেলও নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছ। বেলগাছিয়ার ঘিঞ্জি বস্তিতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর আসতেই এদিন পুরকমিশনারকে ডেকে পাঠান মেয়র।
প্রায় দু’সপ্তাহ আগে বসতির প্রতিটি ঘরে অসুস্থদের সন্ধানে কার্যত তল্লাশি চালাতে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা এখনও কেন ১০০ শতাংশ কার্যকর হয়নি তা জানতে চান ফিরহাদ। কমিশনারের জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে মেয়র প্রতিটি বরোতে ‘অ্যাসেসমেন্ট’ বিভাগের ম্যানেজার ও ওয়ার্ডে পিছু দু’জন সহকারি ম্যানেজার নিয়োগের নির্দেশ দেন। পরে একপ্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, “বসতিবাসীরা অনেকেই বুঝতে পারেন না কোনটা সাধারণ সর্দি-কাশি, আর কোনটা করোনার লক্ষণ। তাই পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরাই ওই অসুস্থদের তথ্য সংগ্রহ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।” খিদিরপুর ও বউবাজারের দুই ফুটপাতবাসীর এর আগে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছিল। স্বভাবতই বস্তি ও ফুটপাতের সংক্রমণ নিয়ে মেয়র যে খুবই উদ্বিগ্ন তার প্রমাণ মিলেছে পুরসভার সমস্ত কাউন্সিলরদের ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে বাড়ি বাড়ি নজরদারি চালাতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.