কৃষ্ণকুমার দাস: দলকে না জানিয়ে বিধানসভায় অনুপস্থিত বিধায়কদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে যে সমস্ত বিধায়ক অনুমতি ছাড়াই অধিবেশনে গরহাজির ছিলেন তাঁদের চিহ্নিত করছে তৃণমূল পরিষদীয় দল। ইতিমধ্যে ১৬/১৭ জন বিধায়কের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। চিহ্নিত বিধায়কদের কৈফিয়ত তলব করে জবাবে অসন্তুষ্ট হলে ‘হলুদ কার্ড’ দেখাবে পরিষদীয় দল। তবে তার আগে গোপনে খতিয়ে দেখা হচ্ছে ঠিক কোন ‘বৈধ কারণে’ তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দলীয় প্রস্তাবের আলোচনা ও ভোটাভুটিতে অংশ নিলেন না।
দলের অন্যতম প্রবীণ নেতা তথা পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “দলকে না জানিয়ে অধিবেশনে গরহাজির বিধায়কদের নামের তালিকা মুখ্যসচেতকের কাছে চেয়েছি। প্রত্যেককে ডেকে জানতে চাইব, সভায় হাজির থাকতে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁরা অনুপস্থিত ছিলেন? জবাবে সন্তুষ্ট না হলে বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেব।”
এবার বিধানসভার (Bidhansabha) অধিবেশন শুরুর প্রথমদিনেই পরিষদীয় দলের বৈঠকে সমস্ত বিধায়কদের কার্যত সতর্ক করেছিলেন তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব। অন্যান্য সমস্ত কাজ ফেলে সবাইকে প্রতিদিন বিধানসভায় পুরো সময় হাজির থাকতেই হবে। এটা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ বলে সভায় উল্লেখ করেছিলেন স্বয়ং পরিষদীয় মন্ত্রী। একই বক্তব্য রেখেছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সাংসদ সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসরাও। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করে যেদিন শাসকদলের তরফে বিধানসভায় ইডি-সিবিআই নিয়ে প্রস্তাব এল, ভোটাভুটি হল সেদিনই ২৭ জন তৃণমূল বিধায়ক সভায় গরহাজির। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং সভায় দীর্ঘক্ষণ থাকলেও দলের ২১৬ জন বিধায়কের মধ্যে ১৮৯ জন হাজির ছিলেন। বিজেপির দাবি মেনে ভোটাভুটি শেষ হতেই প্রশ্ন উঠে বাকিরা কোথায়?
প্রাথমিক তথানুসন্ধান শেষে খবর, মানিক ভট্টাচার্য সভায় প্রথমার্ধে এলেও দ্বিতীয়ার্ধে থাকবেন না বলে ফিরহাদ হাকিমকে জানিয়েই ছুটি নেন। পরিষদীয় মন্ত্রী ও মুখ্যসচেতককে আরও কয়েকজন ফোনে আগাম জানিয়ে ছুটি নেন। পরিষদীয়মন্ত্রীর সরল স্বীকারোক্তি, “অনুমতি নিয়ে অনুপস্থিত থাকা বিধায়কের সংখ্যা পাঁচ-ছয়ের বেশি হচ্ছে না।” তবে অসুস্থতা ও চিকিৎসাজনিত নানা কারণে আরও কয়েকজন বিধায়ক আগে থেকেই স্পিকারকে চিঠি দিয়েই চলতি অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকছেন।
শাসকদলের মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ স্বীকার করেন, “ভোটাভুটি ও অনুমতি নেওয়া এমএলএ, সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ২০০ পার হচ্ছে না। দলের বিধায়ক তো ২১৬, তা হলে বাকিরা কোথায় ছিলেন?” এরপরই মুখ্যসচেতকের কড়া হুঁশিয়ারি, “অনুপস্থিতদের বিরুদ্ধে পরিষদীয় দলের তরফে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়ে ‘এটাই লাস্ট চান্স’ বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হবে।” একসঙ্গে ২৭ জন দলীয় সহকর্মী অনুপস্থিত থাকায় কিছুটা বিব্রত স্বয়ং নির্মল ঘোষও। তাঁর ব্যাখ্যা, “আগে তবু মিটিং বা জরুরি প্রশাসনিক কাজ থাকলে মুখ্যমন্ত্রী বিধায়কদের ছাড় দিতে বলতেন। কিন্তু এখন তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আগে বিধানসভার অধিবেশন, সম্পূর্ণ সময় এবং প্রতিদিনই সভায় থাকতে হবে বিধায়কদের।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.