অর্ণব আইচ: বিদেশিনীর পেটের অবিরাম ঘূর্ণিতে আবিষ্ট দর্শক। উন্নত নাভীর চারপাশের মৃদু কম্পনে শরীর মনে উঠছে কামুক ঝড়। রেস্তোরাঁর বল রুমে ছুটছে পেগের ফোয়ারা।
সালসা, সাম্বা, জুম্বা কিংবা অন্য কোনও বিদেশি নাচ চিনতে ভুল হলেও বেলি ডান্স চিনতে ভুল করে না রসিক বাঙালি। বর্ষবরণের এই সময়টা তো নয়ই। কলকাতার একাধিক নামি পানশালা-হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে বেলি ডান্সের আসর। ডিসেম্বরের শুরু থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি। এই সময়টাই আরব, তুর্কি কিংবা পশ্চিম এশীয় দেশগুলি থেকে বেলি ডান্স দেখাতে এদেশে আসেন মোহময়ী রমণীরা। বলতে গেলে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে এই রীতি।
কোমর আর পাঁজরের ছোট ছোট অথচ দ্রুত মুভমেন্ট। নাগাড়ে ঝড়ের গতিতে কোমর, পেট কিংবা পাঁজরের কামুক দুলুনি। মনে হয় যেন শরীরে স্প্রিং রয়েছে। বিদেশিনিদের এই বেলি স্টেপগুলি দেখার জন্যই একসময় ভিড় লেগে থাকত হোটেল রেঁস্তোরাগুলিতে। সামনের টেবিল বিকোতো চড়া দামে।
কিন্তু এবার সেই রীতির ছেদ পড়তে চলেছে। বেলি ডান্স দেখাতে এবার আর শহরে আসছেন না কোনও বিদেশী রমণী। কলকাতা পুলিশ সূত্রে তেমনই জানা গিয়েছে। উলটে সেই ফ্লোর কাঁপাতে এবার একাধিক হোটেল রেস্তোরাঁর পছন্দ পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লির মেয়েরা।
সাধারণত বিদেশ থেকে বেলি ডান্সার আনতে লালবাজারের যে দপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে হয় বুধবার দুপুরে সেখান থেকে জানানো হয়েছে, এবছর এখনও পর্যন্ত বিদেশি বেলি ডান্সারের জন্য অনুমতি চেয়ে কোনও আবেদন জমা পড়েনি। লাল বাজারের এক কর্তার কথায়, “বিদেশি বেলি ডান্সারের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও আবেদন আসেনি। এ ধরনের আবেদন অন্তত এক মাস আগে জমা দিতে হয়। কারণ সংশ্লিষ্ট নথি তৈরি করেতে সময় লাগে। সাধারণত ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়।”
কিন্তু এবার এমনটা কেন?
রেস্তোরাঁ, হোটেল মালিকদের কথায়, বিদেশিনীরা নয়। বেলি ডান্সে এখন ফ্লোর কাপাচ্ছে হরিয়ানা, দিল্লি আর পাঞ্চাবের মেয়েরা। তাছাড়া, আরব, মিশর বিংবা অবিভক্ত সোভিয়েত রাশিয়ার দেশগুলি থেকে নর্তকী আনতে যেমন খরচ বেশি তেমন আইনি ঝামেলাও রয়েছে। তাছাড়া বিদেশ থেকে নর্তকী আনলে রেস্তোরাঁ মালিকদের শুধু মাত্র বেলি ডান্সেই সীমাবন্ধ থাকতে হত। বিভিন্ন হিন্দি গানে আইটেম ড্যান্স তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বেলি ডান্সের পাশাপাশি দেশি আইটেম গানের চাহিদা তুঙ্গে তাই বিদেশি বেলি ডান্সার নয়, এখন বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানে দেশীয় নর্তকীদেরই পছন্দ রসিক বাঙালির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.