অভিরূপ দাস: দুয়ারে দাঁতের চিকিৎসা। কাঠখড় পুড়িয়ে রোগীকে আসতে হবে না, গোটা হাসপাতালটাই পৌঁছে যাবে রোগীর কাছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ভ্রাম্যমান দন্ত চিকিৎসালয় চালু করছে স্বাস্থ্যদপ্তর। দাঁতের চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজকেই (Dr R Ahmed Dental College and Hospital ) দেওয়া হচ্ছে এই বাস।
দাঁতের সমস্যা তো বটেই, দেখা গিয়েছে আশি শতাংশ ক্ষেত্রেই মুখের ক্যানসার প্রথম ধরতে পারেন দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ। যাঁরা নিয়মিত দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেন ফার্স্ট স্টেজেই তাঁদের মুখের ক্যানসার ধরা পড়ে। গুটখা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ক্রমশ বাড়ছে মুখের অভ্যন্তরের ক্যানসার। এই মুহূর্তে রাজ্যে মোট ক্যানসারের মধ্যে ত্রিশ শতাংশ মুখগহ্বরের। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, পুরুষদের মধ্যে মুখগহ্বরের ক্যানসারের ঝুঁকি মেয়েদের তুলনায় দ্বিগুণ। আরেকটি সমীক্ষাও চোখ কপালে তোলার মতো। ভারতে বছরে তামাক জনিত ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয় ১ লক্ষের সামান্য বেশি মানুষ। অন্য দিকে মুখগহ্বরের ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৯৯,৪৯৫ জন। অর্থাৎ ফুসফুসের ক্যানসারের ঘাড়ের কাছেই নিশ্বাস ফেলছে মুখ গহ্বরের ক্যানসার।
এমতাবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যদপ্তরের এই ভ্রাম্যমান দন্ত চিকিৎসাকেন্দ্র নিয়ে আশাবাদী ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখা। রাজ্যে শুধুমাত্র দন্ত চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল। ফি দিন অগুনতি রোগী আসেন প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক ডা. রাজু বিশ্বাস জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর কাছে তাঁরা চিঠি দিয়েছিলেন। দাবি জানিয়েছিলেন, একটি ভ্রাম্যমাণ দন্ত চিকিৎসা কেন্দ্র খোলার জন্য। অবশেষে তা চালু হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে (Mamata Banerjee) অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫০ আসনের একটি বাসকে দাঁতের হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের সামনে থেকেই যা চলতে শুরু করবে। পৌঁছে যাবে জেলায় জেলায়। এমনকি সুন্দরবনেও। এই ভ্রাম্যমান দন্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরণের দন্ত চিকিৎসক থাকবেন। ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন যেমন থাকবেন, তেমনই থাকবেন দাঁতের আল্ট্রাসোনিক স্কেলিং করার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডেন্টাল কাউন্সিলের রাজ্য সম্পাদক ডা. রাজু বিশ্বাস জানিয়েছেন, মাড়ির ছোট্ট কোনও ঘা থেকেই মুখ গহ্বরের ক্যানসারের (Cancer) শুরু। আমজনতা প্রথমে তা ধরতে পারেন না। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসকরা তাঁকে দ্রুত নিকটবর্তী সরকারী সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করবেন।
দাঁত নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই অধিকাংশ মানুষের। গ্রাম বাংলায় অনেকেই ভাবেন দাঁতে পোকা হয়েছে। হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে পোকা বের করার উপায় খোঁজেন। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের সুপার ডা. তীর্থঙ্কর দেবনাথ জানিয়েছেন, দাঁতে পোকা বলে কিচ্ছু হয় না। দাঁতের মূল সমস্যা হল ক্যাভিটি। যা কিনা দাঁতের ছিদ্র। দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে উপরের চকচকে অংশ ক্ষয়ে ছিদ্র তৈরি হয়। দাঁতে ব্যথা হলেই দাঁত তুলে ফেলার ধারণাও এখন অতীত। এখন দাঁতের যে মূলটি রয়েছে তার সঙ্গে স্নায়ুর যোগাযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ ভাবে দাঁতকে যন্ত্রণাহীন করে রাখা যায়। এমন সব আধুনিক চিকিৎসাও মিলবে ওই ভ্রাম্যমাণ দন্ত হাসপাতালে। রাজ্যের দন্তরোগদের অন্যতম সংগঠন জানিয়েছে, রাজ্য সরকার চাইলে ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের বঙ্গীয় শাখা চিকিৎসক দিয়ে সাহায্য করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.