অর্ণব আইচ: লুঠপাট করার পর জিনিসপত্র বাইরে লুকিয়ে রেখে ফিরে এসে ফ্রিজ খুলে মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছিল ডাকাত। বাড়ির কর্ত্রী ঘুম ভাঙতেই বিপত্তি। যুবককে চেপে ধরল দুই প্রৌঢ়া। বাড়ির রটউইলার কুকুরটি কামড়ে ধরল পা। বেগতিক বুঝে বাড়ির ছোট ছেলেকে ধারালো অস্ত্রের কোপ দিল ডাকাত। শুক্রবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট (Kalighat) থানা এলাকার যদু ভট্টাচার্য লেনে ঘটেছে এই ঘটনাটি।
বাড়ির একতলার তিনটি পাশাপাশি ঘরে থাকেন অ্যাকোরিয়ামের ব্যবসায়ী প্রসেনজিৎ, তাঁর মা ও পিসি। দোতলায় থাকেন পিংকি, তাঁর দাদা দীপঙ্কর। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, রাত ৩টে ৫৯ মিনিটে পরিচিত এক যুবক শেখ নুর মুমতাজ ওরফে রিকিকে সঙ্গে নিয়ে এসে মূল গেট খুলে দিয়ে ভিতরে চলে যায়। মিনিট পাঁচেক পর দুষ্কৃতী ভিতরে ঢোকে। রত্না চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তাঁকে কিছু স্প্রে করে সাময়িকভাবে অচেতন করিয়ে ঘর থেকে সোনার গয়না, প্রতিমার গয়না, পাঁচ হাজার টাকা লুঠ করে কুড়ি মিনিট পর বের হয়। জিনিসগুলি গলির কাছে রেখে দিয়ে ফের কুড়ি মিনিট পর ভিতরে ঢোকে। তখনই ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম খেতে শুরু করে সে। এমনকী, সঙ্গে নিয়ে আসা মদও খায় বলে অভিযোগ।
ভোর পৌনে পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে ননদের ঘরে এসেই দুষ্কৃতীকে দেখতে পান প্রৌঢ়া দীপালি চক্রবর্তী। তিনি আর্তনাদ করে প্রৌঢ়া ননদ রত্নাকে ডাকেন। দুষ্কৃতী পালানোর আগেই তার কলার ধরে ফেলেন দুই ‘বীরাঙ্গনা’। রিকি তাঁদের ঘষটাতে ঘষটাতে ঘর থেকে সামনের প্যাসেজে নিয়ে যায়। তাঁদের চিৎকার শুনে প্রসেনজিৎ তাঁর রটউইলার কুকুর রকিকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রথমেই কুকুরটি দুষ্কৃতীর পা কামড়ে ধরে। সে ধারালো অস্ত্র বের করে কুকুরটিকে আঘাত করতে যায়। আট বছরের সঙ্গী রকি ওরফে প্রিয় ডাবুকে বাঁচাতে তাকে সরে যেতে বলে প্রসেনজিৎ নিজেই ডাকাতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। পকেট থেকে অস্ত্র বের করে তাঁর শরীরে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে ওই ডাকাত।
চিৎকার শুনে দোতলা থেকে নেমে আসেন প্রসেনজিতের দিদি পিংকি। তিনি জানান, ভাইয়ের শরীর রক্তে ভেসে যেতে দেখে তিনি এবার চেপে ধরেন ডাকাতকে। সে তিনজনকে টেনে গেটের দিকে নিয়ে যায়। সে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিংকির হাত ও পায়ে আঘাত করে। আহত অবস্থায় ওই যুবতী ডাকাতের হাতে চাপ দিয়ে অস্ত্র কেড়ে নেন। তাকে নিয়েই ‘বীরাঙ্গনা’ পিংকি নিজে মেঝেয় পড়ে যান। তখনও তাকে ছাড়েননি অন্য দুই প্রৌঢ়া বীরাঙ্গনা। শেষ পর্যন্ত তিন বীরাঙ্গনার কাছে হার মানে ডাকাত। আহত যুবকের মাথায় ১৮টি, হাতে ১৪টি ও গলায় ন’টি সেলাই করতে হয়। কালীঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বাড়ির পাশের গলি ও পিছনদিক থেকে গয়নার একাংশ উদ্ধার করেছে। বাকি টাকা ও গয়না উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের কাছে খবর, বেশ কয়েক বছর জেল খাটার পর ফলের ব্যবসার আড়ালে ফের ডাকাতির ছক কষে ‘দাগী’ রিকি । তবে ‘ক্রাইম রেকর্ড’ থেকে সেই তথ্যের ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হবে। অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্তকে লুঠপাটে মদত জুগিয়েছে পরিবারেরই এক পরিচিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.